ইমাম আজম আবু হানিফা রহঃ এর এক অজুতে ফজর নামাজ আদায় টানা ৪০ বছর

ইমাম আজম আবু হানিফা রাহ. সারারাত জেগে ইবাদত করেছেন। এমন বর্ণনা পাওয়া যায় যদিও বা সূত্র নিয়ে যথেষ্ট কিল-কাল আছে। তথাপি , এমন বর্ণনাকে কেন্দ্র করে একজন বক্তা দেখলাম বলতাছেন –

ইমাম আবু হানীফা সারারাত না ঘুমিয়ে ইবাদত করে রাসূল সা: এর সুন্নাহ বিরোধী কাজ করেছেন।

এই বক্তার মূর্খতা ও পড়াশুনার অসারতা দেখে অবাক হলাম। ঘুরেফিরে সাহাবা/ইমামদেরকেই সমালোচনার পাত্র বানাচ্ছেন কেন উনারা? এছাড়া আর কাউকে পান না? ইমাম আবু হানিফা রাহ. ছাড়া কি আর কেহ সারারাত ইবাদ করার হিস্ট্রি নেই? তাহলে শুধু ইমাম আবু হানীফা রাহ. টার্গেট কেন ??

তাহলে নিচের কয়েকটা দলিল দেখে নেই –

১. সাহাবাদের সারারাত্রী ইবাদত

ক. হযরত উমর বিন খাত্তাব রাঃ এর জীবনীতে ইবনে কাসীর রহঃ লিখেনঃ –

كان يصلى بالناس العشاء ثم يدخل بيته فلا يزال يصلى إلى الفجر، وما مات حتى سرد الصوم، (البداية والنهاية-7/135)

তিনি লোকদের সাথে ইশার নামায আদায় করতেন, তারপর ঘরে এসে ফজর পর্যন্ত সারারাত নামায পড়তেন। ধারাবাহিক রোযা রাখা অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন।

সূত্র – আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৭/১৩৫

খ. ইবনে সিরীন রাহ. থেকে বর্ণিত। উসমান রা. এর স্ত্রী বলেন –

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ أَحْمَدَ، ثَنَا أَبُو يَزِيدَ الْقَرَاطِيسِيُّ، ثَنَا أَسَدُ بْنُ مُوسَى، ثَنَا سَلَّامُ بْنُ مِسْكِينٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، قَالَ: قَالَتِ امْرَأَةُ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ حِينَ أَطَافُوا بِهِ يُرِيدُونَ قَتَلَهُ: «إِنْ تَقْتُلُوهُ أَوْ تَتْرُكُوهُ فَإِنَّهُ كَانَ يُحْيِي اللَّيْلَ كُلَّهُ فِي رَكْعَةٍ يَجْمَعُ فِيهَا الْقُرْآنَ»

(حلية الأولياء-1/56)

যখন লোকেরা হযরত উসমান রাঃ এর হত্যার জন্য ঘুরছিল। তখন তাকে হত্যা করুক বা ছেড়ে দিক, তিনি পুরো রাতই নামায পড়তেন, প্রতি রাকআতে এক খতম কুরআন পড়তেন।

সূত্র , হিলয়াতুল আওয়ালিয়া-১/৫৬

গ. নাফে’ থেকে বর্ণিত –

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ أَحْمَدَ، ثَنَا يَزِيدُ الْقَرَاطِيسِيُّ، ثَنَا أَسَدٌ، ثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، ثَنَا ابْنُ جَابِرٍ، حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ بْنُ مُوسَى، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ، أَنَّهُ كَانَ يُحْيِي اللَّيْلَ صَلَاةً ثُمَّ يَقُولُ: يَا نَافِعُ أَسْحَرْنَا؟ فَيَقُولُ: لَا! فَيُعَاوِدُ الصَّلَاةَ، ثُمَّ يَقُولُ: يَا نَافِعُ أَسْحَرْنَا؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ! فَيَقْعُدُ وَيَسْتَغْفِرُ وَيَدْعُو حَتَّى يُصْبِحَ.

ইবনে উমর রাঃ রাত সজাগ থাকতেন নামায পড়ে। তারপর বলতেনঃ হে নাফে! সকাল প্রভাত হয়ে গেছে? নাফে বলতেনঃ নাহ। তখন তিনি আাবার নামাযে রত হতেন। তারপর আবার জিজ্ঞাসা করতেনঃ হে নাফে! সকাল হয়ে গেছে? তিনি বলতেনঃ হ্যাঁ, তারপর তিনি বসে পড়তেন এবং ইস্তিগফার এবং সকাল পর্যন্ত দুআ করতেন।

সূত্র, হিলয়াতুল আওলিয়া-১/৩০৪

এবার আসি ইমাম আজম আবু হানীফা রাহ. এর চল্লিশ বছর এশার ওজু দিয়ে ফজরের নামাজ পড়া প্রসঙ্গে –

১. প্রথম কথা হচ্ছে সাধারণ আক্বলে বলে এটা অসম্ভব। কেননা , তা একজনের মানুষের পক্ষে সাধারণ আকলে বাস্তবিক হওয়া অসম্ভব প্রায়। কেননা, দীর্ঘ চল্লিশ বছরেও যে একবারেত জন্য অসুস্থ হন নাই বা রাত্রে ওজু ভঙ্গ হয়নাই তা মেনে নেওয়াটা দূরহ ব্যাপার।

২. ধারাবাহিক ৪০ বছর এশার ওজু দিয়ে ফজর পড়াত কথাটা যদি মুবালাগাহ হিসেবে হয় বা বা কাসরতে আমল বুঝাতে হয়, তাহলে অসুবিধার নেই। ধরুন, কেউ একজনের প্রায় তাহাজ্জুদ পড়ার আমল রয়েছে। এভাবে সে আকসর দিনে জীবনের শেষ ২০ টা বছর তাহাজ্জুদ পড়েছে। অত:পর, তার ব্যাপারে বলা হলো যে, লোকটি ধারাবাহিক বিশটি বছর তাহাজ্জুদ পড়েছে। এখানে মুবালাগাহ হিসেবে বলা হয়েছে। বিষয়টি, এমন নয় যে সে একদিনও তাহাজ্জুদ মিস করেনি। মানে হচ্ছে সে অধিকাংশ দিন তাহাজ্জুদ পড়েছে।

৩. আল্লাহর পক্ষে সবই সম্ভব। যে আল্লাহ আসহাবে কাহাফ’কে হাজার বছর এক ঘুমে না খাইয়ে, না হাজাত সেরে দীর্ঘদিন রেখেছেন, সেই আল্লাহর পক্ষে তার প্রিয় বান্দাদের মাধ্যমে এমন আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটানো সম্ভব।


আব্দুল কারীম আল-মাদানী
লন্ডন , যুক্তরাজ্য

থার্টিফার্স্ট নাইট ! ইসলাম কি বলে?

পবিত্র কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ পাক বলেন

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوا الۡیَہُوۡدَ وَ النَّصٰرٰۤی اَوۡلِیَآءَ ۘؔ بَعۡضُہُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَلَّہُمۡ مِّنۡکُمۡ فَاِنَّہٗ مِنۡہُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ
হে মুমিনগণ, ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়াত দেন না। (সূরা মায়েদা – ৫১)

খ্রিস্টবর্ষের ৩১ শে ডিসেম্বর রাত ১২ টা ১ মিনিটকে থার্টিফার্স্ট হিসাবে উদযাপন করা হয়। পুরনো বছরকে বিদায় জানানো ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উপলক্ষে নেশা ও অবৈধ যৌনতার উন্মাদনায় মেতে উঠে মানবসন্তানেরা। অপচয় ও অপব্যয়ের প্লাবনে ভাসে একেকটি আয়োজন। ইসলামি জীবন বিধান অনুযায়ী একাজগুলো মারাত্মক অপরাধ। সারাবিশ্বের মুসলিম মনীষীগণ এ দিবস পালনের অপসংস্কৃতিকে হারাম বলে অভিহিত করেছেন।

✅ থার্টিফার্স্ট নাইটের উৎপত্তি

খ্রিস্টপূর্ব ’৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন। পরবর্তীতে ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তিত হয় ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে। এই ক্যালেন্ডার চালু করে খৃস্টানদের তথাকথিত ধর্মযাজক, (যার বিবাহ বহির্ভূত একটি সন্তান ছিল) পোপ গ্রেগরি। ১৫৮২ খৃষ্টাব্দ থেকে পোপ গ্রেগরির ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পাকাপোক্তভাবে ১লা জানুয়ারি (থার্টিফার্স্ট নাইট) নববর্ষ পালনের রেওয়াজ শুরু হয়। যার সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের কোন সম্পর্ক নেই।

✅ বাংলাদেশে প্রসার কখন থেকে

বাংলাদেশে ২০০০ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর মধ্যরাতের মিলেনিয়াম বা সহস্রাব্দ পালনের মধ্য দিয়ে। এরপর এ অপসংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার ঘটে। বিত্তশালী ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের যুবক-যুবতীদের মধ্যে ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এ রাতে নতুন বর্ষে পদার্পন উপলক্ষে বেহায়া-বেলেল্লাপনার সাগরে হারিয়ে যায় যুবক যুবতিরা। আমাদের সমাজে সংঘটিত পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হয়।
এ দিবস পালনের ক্ষেত্রে যা যা ঘটে—

🔥এক. বিধর্মীদের সঙ্গে সাদৃশ্য

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের রীতি চালু হয়েছে খ্রিষ্ট জগতে। সুতরাং এ দিবস পালনের মাধ্যমে বিধর্মীদের সাদৃশ্য অর্জন করা হয়। ইসলামবিজাতীয় সংস্কৃতি পালন করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّ الدِّیۡنَ عِنۡدَ اللّٰہِ الۡاِسۡلَامُ ۟
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ইসলামই একমাত্র মনোনীত দীন। ( আলে ইমরান : ১৯)

তিনি আরও বলেন,
وَ مَنۡ یَّبۡتَغِ غَیۡرَ الۡاِسۡلَامِ دِیۡنًا فَلَنۡ یُّقۡبَلَ مِنۡہُ ۚ وَ ہُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ
‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের অনুসরণ করবে কখনো তার সেই আমল গ্রহণ করা হবে না। আর পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ( আলে ইমরান : ৮৫)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করলো,সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।( আবূ দাউদ – ৪০৩৩ }

🔥দুই. আঁটসাঁট পোশাক পরা : –

তরুণ-তরুণীরা নগ্নপ্রায় পোশাক পরে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ প্রসঙ্গে বলেন,
عَنْ أَبِـىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا
যে নারীরা পোশাক পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ, পরপুরুষকে আকৃষ্ট করে, নিজেরাও আকৃষ্ট হয়, যাদের মাথা বাকা উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের মতো; তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। যদিও তার সুঘ্রাণ দূর-দূরান্ত হতে পাওয়া যাবে। ( মুসলিম : ২১২৮)

🔥তিন. ট্যাটু আঁকা

ট্যাটু বা উল্কি অঙ্কন বলতে বুঝায়, শরীরের চামড়ায় সুঁই বা এ জাতীয় কোনো কিছু দিয়ে ক্ষত করে তাতে বাহারি রং দিয়ে নকশা করা। ইসলামের দৃষ্টিতে ট্যাটু আঁকা হারাম।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : لَعَنَ اللَّهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ والواشمة والمستوشمة
উমর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘যে নারী নকল চুল ব্যবহার করে, অন্য নারীকে নকল চুল এনে দেয়, নিজ শরীরে উল্কি অঙ্কন করে নেয় কিংবা অন্যের শরীরে উল্কি অঙ্কন করে দেয়, আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন।’ ( বুখারী – ৫৯৩৩, ৫৯৩৪, ৫৯৩৭ )

🔥চার. আতশবাজি, পটকাবাজি

আনন্দের আতিশয্যে মধ্যরাত থেকে শুরু হয় আতশবাজি ও পটকাবাজির মহড়া। বিভিন্ন সড়কে, ভবনের ছাদে, প্রকাশ্যে স্থানে উঁচু আওয়াজের পটকা ফুটানো হয়, এ ধরনের অসুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টি হয়। সাধারণ জনগণ বিরক্ত হোন এবং হৃদরোগীরা ভীষণ কষ্ট পান। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন –
وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ بِغَیۡرِ مَا اکۡتَسَبُوۡا فَقَدِ احۡتَمَلُوۡا بُہۡتَانًا وَّ اِثۡمًا مُّبِیۡنًا •
‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়; তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহজাব : ৫৮)

🔥পাঁচ. গান-বাজনা করা :

ডিজে পার্টি, ফ্যাশন শো, ফায়ার প্লে, কনসার্ট, অশ্লীল নৃত্য, ফানুস উড়ানো ইত্যকার কাজগুলো ছাড়া কোনো বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয় না। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَہۡوَ الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ٭ۖ وَّ یَتَّخِذَہَا ہُزُوًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ مُّہِیۡنٌ
‘এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। এদের জন্যে রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি’। (সুরা লুকমান : ৬ )

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন,
عَنْ أَبِي مَالِكٍ الأَشْعَرِيِّ رضي الله تعالى عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ـ لَيَشْرَبَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي الْخَمْرَ يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا، يُعْزَفُ عَلَى رُءُوسِهِمْ بِالْمَعَازِفِ وَالْمُغَنِّيَاتِ يَخْسِفُ اللَّهُ بِهِمُ الأَرْضَ وَيَجْعَلُ مِنْهُمُ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ ‏”‏ ‏.‏
‘আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদের পৃথিবীতে ধসিয়ে দেবেন। (ইবনে মাজাহ : ৪০২০; আবূ দাউদ : ৩৬৮৮)

🔥 ছয়. মাদক সেবন করা :

এ রাতে তরুণ-তরুণীরা মাদক রাজ্যে অবগাহন করে। মাতাল হয়ে ঘটায় নানা অপকর্ম। আল্লাহ তাআলা মাদক থেকে নিষেধ করে বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ • اِنَّمَا یُرِیۡدُ الشَّیۡطٰنُ اَنۡ یُّوۡقِعَ بَیۡنَکُمُ الۡعَدَاوَۃَ وَ الۡبَغۡضَآءَ فِی الۡخَمۡرِ وَ الۡمَیۡسِرِ وَ یَصُدَّکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ وَ عَنِ الصَّلٰوۃِ ۚ فَہَلۡ اَنۡتُمۡ مُّنۡتَہُوۡنَ •
হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। শয়তান মদ, জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না? ( সুরা মায়েদা : ৯০-৯১ )

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ “‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ خَمْرٍ ‏”‏ ‏
আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ শরাব পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (ইবনে মাজাহ : ৩৩৭৬ আহমাদ : ২৬৯৩৮)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ـ ‏”‏ مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ وَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا وَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ رَدْغَةِ الْخَبَالِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا رَدْغَةُ الْخَبَالِ قَالَ ‏”‏ عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ ‏•
আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শরাব পান করে এবং মাতাল হয়, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হয় না। সে মারা গেলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তা‘আলা তার তওবা কবুল করবেন। সে পুনরায় শরাব পানে লিপ্ত হলে কিয়ামতের দিন অল্লাহ তা‘আলা অবশ্যি তাকে ‘‘রাদগাতুল খাবাল’’ পান করাবেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ‘রাদগাতুল খাবাল’ কী? তিনি বলেনঃ জাহান্নামীদের দেহ থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত। (তিরমিযী : ১৮৬২, ইবনে মাজাহ : ৩৩৭৭)

🔥 সাত. যিনা – ব্যভিচার :

এ রাতে যুবক-যুবতীরা অবাধে মেলামেশা ও অপকর্মে লিপ্ত হয়। আবাসিক হোটেল, কমিউনিট সেন্টার, পানশালা, নাচঘর, সমুদ্র সৈকত, নাইট ক্লাবগুলো পরিণত হয় একেকটি অঘোষিত পতিতালয়ে। সতীত্ব হারায় আমাদের উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা। আল্লাহ তাআলা যিনা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হতেও বারণ করে বলেন,
وَ لَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّہٗ کَانَ فَاحِشَۃً ؕ وَ سَآءَ سَبِیۡلًا
‘তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ ( বানি ইসরাইল : ৩২)

¶ যিনার শাস্তি (বোখারি – ৭০৪৭)
فَانْطَلَقْنَا حَتَّى أَتَيْنَا إِلَى ثَقْبٍ مِثْلِ التَّنُّورِ أَعْلَاهُ ضَيِّقٌ وَأَسْفَلَهُ وَاسِعٌ تَتَوَقَّدُ تَحْتَهُ نَارٌ فَإِذَا ارْتَفَعَتِ ارْتَفَعُوا حَتَّى كَادَ أَنْ يَخْرُجُوا مِنْهَا وَإِذَا خَمَدَتْ رَجَعُوا فِيهَا وَفِيهَا رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ فَقُلْتُ: مَا هَذَا؟ قَالَا : وَالَّذِي رَأَيْتَهُ فِي الثَّقْبِ فَهُمُ الزُّنَاةُ •
আমরা সম্মুখের দিকে অগ্রসর হলাম। সেখানে একটি গর্তের নিকট এসে পৌঁছলাম যা তন্দুরের মতো ছিল। এটার উপরিঅংশ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশটি ছিল প্রশস্ত। তার তলদেশে আগুন জ্বলছিল। আগুনের লেলিহান শিখা যখন উপরের দিকে উঠছে, তখন তার ভিতরে যারা রয়েছে তারাও উপরে উঠে আসছে এবং গর্ত হতে বাইরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। আর যখন অগ্নিশিখা কিছু স্তিমিত হচ্ছে তখন তারাও পুনরায় ভিতরের দিকে চলে যাচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে কিছুসংখ্যক উলঙ্গ নারী ও পুরুষ। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এটা কী? আর (আগুনের) তন্দুরে যাদেরকে দেখেছেন তারা হলো যিনাকার (নারী-পুরুষ)।

ইবনু ওমর (রা:) থেকে বর্নিত: নবিজি (সা.) বলেন,
أَلاَ لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ
অবশ্যই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হলে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান। (তিরমিজি – ২১৬৫)

🔥আট. অর্থ অপচয়

এ রাত উপলক্ষে যেসব আয়োজন করা হয়— সর্বক্ষেত্রেই থাকে অর্থ-অপচয়ের প্লাবন। অথচ ইসলাম যাবতীয় অর্থ অপচয় থেকে বারণ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ خُذُوۡا زِیۡنَتَکُمۡ عِنۡدَ کُلِّ مَسۡجِدٍ وَّ کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ۚ اِنَّہٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ •
‘আদম সন্তান, তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরো। খাও, পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালবাসেন না।’
( সুরা আরাফ : ৩১)

اِنَّ الۡمُبَذِّرِیۡنَ کَانُوۡۤا اِخۡوَانَ الشَّیٰطِیۡنِ ؕ وَ کَانَ الشَّیۡطٰنُ لِرَبِّہٖ کَفُوۡرًا •
নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।
(বনী ইসরাইল – ২৭)

🔥নয়. সময়ের অপচয়

ইসলাম ধর্মানুযায়ী মানুষের প্রতিটি মুহূর্তই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করে যে সময়গুলো নষ্ট করছি সেগুলো কি কখনও ফিরে আসবে? এ সময়টিতে আত্মপর্যালোচনা করার প্রয়োজন ছিল, বিগত বছরটা কতটুকু উৎপাদশীল ও কল্যাণকর কাজে ব্যয় করতে পেরেছি? আমি তো দিনদিন মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্চি। সুতরাং আগামীর দিনগুলো যেন এরচেয়েও বেশি ফলপ্রসূ হয়।

🔥দশ. শিরকযুক্ত স্লোগান

এ রাতে বর্ষবরণ উপলক্ষে শিরকযুক্ত স্লোগান দেওয়া হয়। লোকজন বলে,

মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা |
অগ্নি স্নানে সূচি হোক ধরা ||

আনন্দের বন্যায় |
ভেসে যাবে অন্যায় ||

এ স্লোগানে অগ্নিপূজকদের আগুন দ্বারা পবিত্র হওয়ার ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রতিধ্বনিত হয়। যা শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّ اللّٰہَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَکَ بِہٖ ؛
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তার সঙ্গে অংশীস্থাপনকারীকে ক্ষমা করবেন না।’
(সুরা নিসা : ১১৬)

কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে ধ্বংস করতে হয়— তাদের সভ্যতা সংস্কৃতি ঐতিহ্য; তাহলে ধ্বংসযজ্ঞের বাকি কাজ এমনিতেই সমাধা হয়ে যায়। বদলে যায় ইতিহাসের গতিপথ। আমরা সেই বদলে যাওয়া পথেই হাঁটছি। বাস্তবতার নিরিখে যাচাই করলে দেখা যায়— এ দিবস শুধু বাংলাদেশের রাষ্টধর্ম ইসলামের মানদণ্ডেই অবৈধ তা নয় বরং বাঙালি সংস্কৃতিতেও এর কোনো বৈধতা নেই। আজ বাংলাদেশে ধর্মীয় মূল্যবোধ নষ্ট হওয়া ও পারিবারিক বন্ধন টুটে যাওয়ার বড় অনুঘটক হিসেবে এ ধরনের দিবস পালনের দায় এড়ানো যাবে না। সুতরাং থার্টি ফার্স্ট নাইটের মতো অসাংবিধানিক সাস্কৃতিক আগ্রাসন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।


আসুন, আমরা অনতিবিলম্বে ঈমান ও সমাজবিধ্বংসী অপসংস্কৃতি পরিত্যাগ করে আচার-আচরণে, সভ্যতা-সংস্কৃতিতে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে ও সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দিন। আমিন।

ঈদে মিলাদুন্নবী সাঃ এর দলিল

ঈদে মীলাদুন্নবী সা. এর যৌক্তিক তথ্য ও দলীল ভিত্তিক রেফারেন্স একত্রে এক নজরে জেনে নেবার মত একটি পদক্ষেপ ♥️🥰

|| দারুননাজাত মাদরাসা কিতাব বিভাগ ||

বিঃদ্রঃ- কেহ দ্বীন প্রচারের স্বার্থে এটা নিতে চাইলে ইনশাআল্লাহ ফ্রিতে এটা বিতরণ করা হয়ে থাকে। যাদের প্রয়োজন তারা নিতে পারেন।

মুহতারাম ফরীদগন্জী হুজুরসহ যারা এই খেদমতে শ্রম ও মেধা দিছে সবাইকে উভয় জাহানে উত্তম কল্যাণ ও বরকত দান করুক, আমিন।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে, যোগাযোগ করুনঃ- https://www.facebook.com/bchdskm1990

সুকৌশলে দেহবাদী আক্বীদা যারা প্রবেশ করালো ইসলাম ধর্মের মধ্যে

মুসলমানদেরকে তাদের মৌলিকত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের মতো বানিয়ে দেয়ার জন্য দু’টি কাজ ছিলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এমন আকিদা – বিশ্বাস প্রচার করা যা আল্লাহর সম্পর্কে ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের আকিদা – বিশ্বাসের সাথে বড় ধরণের কোন বিরোধ না থাকে। সেই হিসেবে সুকৌশলে মুসলমানদের মাঝে দেহবাদী আকিদার ব্যাপক বিস্তার ছিলো তাদের প্রাথমিক কাজ। আরেকটি বড় কাজ ছিলো, নবীজীর থেকে উম্মতের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। এর জন্য নবীজীর আজমত ও মহব্বত প্রকাশ পায় এমন সব কাজকে হারাম, নাজায়েজ, শিরক, বিদয়াত ইত্যাদি হিসেবে তুলে ধরা। এর মধ্যে নবীজীর ওসিলাকে শিরক বানান, তার কবর জিয়ারতকে হারাম বলা, তার স্মরণে কৃত মিলাদ-মাহফিলকে সবচেয়ে বড় বিদয়াত বা নিকৃষ্ট বিদয়াত বলা থেকে শুরু হয়। এই পর্যায়ের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হলে নবীজীকে নানাভাবে খাটো করা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার রাস্তা তৈরি করা হয়। এগুলো এক দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের প্রক্রিয়া হিসেবে চলমান আছে। মুসলমানদেরকে সার্বিকভাবে দুর্বল করতে এবং ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের কাছাকাছি নিতে এটি ছিলো কার্যকর পদ্ধতি। আর এই সবই করা হয়েছে ইসলামের বিশুদ্ধবাদিতার দাওয়াতে। শিরক থেকে মুক্ত হওয়ার দাওয়াত দিয়ে দেহবাদী বানিয়ে আরও বড় শিরকের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নবীজীর বিষয়ে শিরক থেকে বাঁচার দাওয়াত দিয়ে নবীজীর প্রতি সব-ধরণের আজমত নষ্ট করে তাঁকে খাটো করার বিভিন্ন সবক শেখান হয়েছে। এভাবে সবচেয়ে ভালো কথা বলে সুফাহাউল আহলামরা সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজগুলো করে আসছে উম্মতের সাথে।

হিন্দুস্তানে ব্যাপকভাবে খ্রিষ্টান মিশনারীরা যখন কাজ শুরু করে তখন তারা নবীজীকে তাদের টার্গেট বানায়। নানাভাবে নবীজীর ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা থেকে শুরু করে মুসলমানদের মাঝে বিদ্যমান নবীজীর আজমত সংক্রান্ত আমলগুলো থেকে বিমুখ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। বিভিন্ন জায়গায় তারা সভা-সেমিনার করতে থাকে। ইসলামের উপর নানা আপত্তি সমাজে ছড়াতে থাকে। পাদ্রী ও মিশনারিদের এই হীন ষড়যন্ত্রের বিষয়ে হিন্দুস্তানে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন মাওলানা রহমাতুল্লাহ কিরানবী রহ:। তার অদ্বিতীয় গ্রন্থ ইজহারে হক্ব এখনও পর্যন্ত পুরো বিশ্বের মানুষের কাছে সর্বমহলে সমাদৃত একটি কিতাব। খ্রিষ্টানদের সাথে বাহাস, তাদের বিরুদ্ধে কিতাবাদি রচনার অভিজ্ঞতা থেকে কিরানবী রহ: গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় লিখেছেন। এগুলো আমাদের জানা দরকার। নিচে ‘আনোয়ারে সাতিয়া’ কিতাবে রহমাতুল্লাহ কিরানবী রহ: এর বক্তব্যের অনুবাদ তুলে ধরছি।

রহমাতুল্লাহ কিরানবী রহ: আনোয়ারে সাতিয়া কিতাবে তার প্রশংসাবাণীতে লিখেছেন,

“আনোয়ারে সাতিয়া নামক কিতাবটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি ভালোভাবে শুনেছি। উত্তম বর্ণনাভঙ্গি ও সাবলীল উপস্থাপনা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। কিতাবের প্রশংসায় যদি কিছু লিখি, তাহলে মানুষ সেটাকে অতিরঞ্জন হিসেবে নিবে। এজন্য কিতাব সম্পর্কে প্রশংসা না করে দু’য়াকেই যথেষ্ট মনে করছি। আল্লাহ তায়ালা যেন লেখককে অফুরন্ত সওয়াব ও অতি উত্তম বদলা দান করেন। এই পুস্তকরে মাধ্যমে মিলাদ বিরোধীদের গোঁড়ামীপনাকে ভেঙে তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। এবং লেখকের ইলম, ফয়েজ ও সুস্থতায় আল্লাহ তায়ালা বরকত দান করুন।

পবিত্র মিলাদ সম্পর্কে আমার ও আমার উস্তাগণের পূর্ব থেকেই এই বিশ্বাস ছিলো এবং এখনও আছে বরং সত্য কসম খেয়ে এটা বলা যায় যে, আমার ইচ্ছা হলো, (ফার্সী কবিতার অনুবাদ) এর উপরই জীবন কাটিয়েছি, এর উপরই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে চাই।

এ বিষয়ে আমাদের আকিদা হলো,
মিলাদের মজলিশ যদি বিভিন্ন ধরণের শরীয়াত বিরোধী কর্মকান্ড যেমন, গান-বাজনা এবং অনর্থক অতিরিক্ত আলোক-সজ্জা না হয় এবং বিশুদ্ধ বর্ণনার আলোকে নবীজীর মু’জিজা ও তার জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করা হয়, এরপর পাকান খাবার বা শিরনিও যদি দেয়া হয়, তাহলে এধরণের মিলাদ করতে কোন সমস্যা নেই। বরং বর্তমান সময়ে চারিদিকে পাদ্রীরা যেভাবে শোরগোল শুরু করেছে, বাজারে বাজারে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার দ্বীনকে নিন্দা-মন্দ বলা শুরু করেছে, অন্যদিকে আরিয়া সমাজ পাদ্রীদের মতো বা তাদের চেয়ে বেশি হাঙ্গামা শুরু করেছে, এ পরিস্থিতে উপরে উল্লেখি শর্ত অনুযায়ী এধরণের মিলাদ মাহফিল করা ফরজে কিফায়া। আমি মুসলিম ভাইদেরকে নসীহাত হিসেবে বলছি, এধরণের মাহফিল করা থেকে বিরত হবেন না। এবং যারা গোঁড়ামী বশত: এগুলোর বিরোধিতা করে তাদের প্রতি কখনও ভ্রুক্ষেপ করবেন না। মিলাদের দিন নির্দিষ্ট করার ক্ষেত্রে যদি এই আকিদা না থাকে যে, ওই দিন ছাড়া অন্য দিন জায়েজ নেই, তাহলে এভাবে দিন নির্ধারণে কোন শরয়ী সমস্যা নেই। এধরণের দিন নির্ধারণের বৈধতা শরীয়াতে খুব ভালোভাবে প্রমাণিত। আর মিলাদে ক্বিয়ামের বিষয়টি তো ৬ শ’ বছর ধরে মুসলমানদের মাঝে চলে আসছে। অধিকাংশ নেককার উলামায়ে কেরাম যেমন, কালামের উলামায়ে কেরাম, সুফিয়া কেরাম ও মুহাদ্দিসগণ একে জায়েজ বলেন। এ বিষয়ে বক্ষমান কিতাবের লেখকও বিষয়টি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।

ঐ সমস্ত বিরোধীদের ব্যাপারে আশ্চর্যন্বিত হতে হয়, তারা বিরোধিতার ক্ষেত্রে এতো বেশি অগ্রসর হয়েছে যে, তারা মরক্কোর এক আলিম ফাকিহানীর মুকাল্লিদ হয়ে তারা জমহুর সালাফে সালেহীন যাদের মধ্যে মুতাকাল্লিমীন, মুহাদ্দিসীন ও সুফিয়া কেরাম রয়েছেন, তাদের সবাইকে মুহূর্তে বিসর্জন দিয়ে দিয়েছেন। তাদেরকে পথভ্রষ্ট ও অন্যদের পথভ্রষ্টকারী বানিয়ে দিয়েছে। তারা আল্লাহকে এতটুকু ভয় করেনি যে, এই কাতারে তাদের উস্তাদগণ ও পীরও রয়েছে। যেমন, শাহ আব্দুর রহীম দেহলভী রহ:, শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহ:, তার পুত্র শাহ আব্দুল কাদির রহ, তার ভাই শাহ আব্দুল আজিজ রহ:, তার নাতী শাহ ইসহাক রহ:। তাদের সবাই এই দ্বাল ও মুদ্বিল ( নিজে পথভ্রষ্ট ও অন্যকে পথভ্রষ্টকারী) এর কাতারে শামিল হয়ে যায়। এধরণের হঠকারিতার উপর আফসোস, যার কারণে জমহুর মুতাকাল্লিমীন, হারামাইন, মিশর, শাম, ইয়ামানের সূফিয়া কেরাম ও মুহাদ্দিসীন এবং অন্যান্য দেশের লাখ লাখ লোক সবাই গোমরাহ হবে আর হাতে গোনা এই কয়জন লোক হিদায়াতের উপর? হে আল্লাহ আমাদেরকে ও তাদেরকে হেদায়াত দান করুন এবং সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।

আর যারা আমার নামে একথা প্রচার করে যে, আরবদের ভয়ে আমি আসল বিষয় প্রকাশ করি না বরং চুপ থাকি, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। বরং এটি তাদের প্রপাগান্ডা। আমি কসম দিয়ে বলছি, আমি সুলতানের সামনে (সেই সময়ের তুর্কি খলিফা) কখনও তার বা তার সভাসদের মর্জির জন্য অবাস্তব বা শরীয়াত বিরোধী কিছু কখনও বলিনি। বরং যেই দু’বার আমাকে ডাকা হয়েছে, প্রত্যেক বারই স্পষ্ট কথা বলেছি। কখনও এটি খিয়াল করিনি যে, সুলতান বা তার সভাসদ আমার উপর নাখোশ হবে। উসমান নূরী বাদশাহর সাথে আমার যে বিরোধ হয়েছিল এবং তার সভাসদে আমার সাথে যেই কথোপকথন হয়েছিল, এটি তো হেজাজের বিশেষ করে হারামাইনের ছোট-বড় সবাই ভালো করে জানে। যদি আমার তাকিয়া করার কিছু থাকত, তাহলে এই সব মিলাদ বিরোধীদের থেকে তাকিয়া করার দরকার ছিলো। আমার মোটামুটি ইয়াকীন আছে যে, এদের হাত থেকে ইমাম সুবকী, জালালুদ্দীন সুয়ূতী, ইবনে হাজার এবং অন্যান্য হাজার হাজার মুত্তাকী উলামায়ে কেরাম, বিশেষ করে তাদের উস্তাদ ও পীরের সিলসিলায় হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ ও অন্যরা যখন বাঁচেনি, আমি নগন্য বান্দা কীভাবে বাঁচব? এরা সব ধরণের তাফসীক ( খারাপ গালাগালি, বিদয়াতি ইত্যাদি বলা) করবে বরং তাকফির (কাফের বলা) করতেও কুন্ঠিত হবে না। কিন্তু আমি তাদের এই ঘৃণ্য কর্মকান্ডকে ভয় পাই না। আমার এই অবস্থানের পক্ষে দলিল হিসেবে বক্ষমান গ্রন্থের লেখক যা তুলে ধরেছেন সেগুলোকে গ্রহণযোগ্য ও যথেষ্ট মনে করি। “

  • রহমাতুল্লাহ বিন খলিলুর রহমান।

প্রিয় পাঠক, উপরের আলোচনা থেকে আশা করি পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা নিস্প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালা সুন্নত প্রতিষ্ঠা বা নিজেদের ভুল বুঝের উপর প্রতিষ্ঠিত বিদয়াত বিরোধিতার নামে সমাজে ফেতনা করা থেকে হেফাজত করুন।

সূত্র:
আনোয়ারে সাতিয়া
লেখক: আব্দুস সামী রামপুরী (হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ: এর খলিফা) পৃষ্ঠা: ৪০৯-৪১০

লিখকের প্রোফাইল লিংকঃ- (সকলে এড হোন)
https://www.facebook.com/hm.ijhar

উম্মতে মোহাম্মদী ভুলের উপর ঐক্যমত পোষণ করবেনা

প্রশ্নঃ- যেদিন হুজুর ইহকাল ত্যাগ করলেন সেদিন’কে ঈদ পালন করার কোনো যুক্তি আছে কি ভাই?

উত্তরঃ-

১। জেনে রাখা প্রয়োজন যে, রাসূল যেদিন দুনিয়ায় আগমন করেছেন এবং পর্দা করেছেন সেই দিনটা একই ছিলো অর্থাৎ “সোমবার”।

কিন্তু এই সোমবার দিনটা একই তারিখের নয়। সোমবার তো প্রতি সপ্তাহে একবার আসে। একই দিন বলে, কেউ যদি চাতুরতার আশ্রয় নেয় সমস্যাটা তো তাদের এবং তাদের যারা ফলো করে সেসব মাথা মোটা ফলোয়ারদের, আমাদের নয়।

ইতিহাসের পাতায় ক্যালেন্ডার

২। কেউ যদি দুনিয়া থেকে পর্দা করে বা ইন্তেকাল করে, তার জন্য শোক করার শরীয়াহ হুকুম হচ্ছে ৩ দিন। তারপর আর শোক করার কোন বিধান নেই। কিন্তু জন্মদিন উপলক্ষে শুকরিয়া আদায় সরুপ এমন বিধিনিষেধ নেই ইসলামে তাই আনন্দ উদযাপন করা যেতেই পারে। আর তারিখ যেহেতু একই নয় তাই দোষণীয় তো নয়ই।

৩। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: إِنَّ اللهَ تَعَالَى لَا يَجْمَعُ أُمَّتِيْ عَلَى ضَلَالَةٍ ‘‘আমার উম্মত গোমরাহীর উপর ঐক্যমত পোষণ করবে না।’ ( আবূ দাউদ হা/৪২৫৩, ইবনে মাজাহ হা/৩৯৫০, তিরমিযী/২১৬৭)

এই হাদিসের আলোকে এবং সারা পৃথিবীতে এক যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করাটাই প্রমাণ করে এটি জায়েজ। কেউ যদি ভিন্ন কিছু বলে তবে বুঝতে হবে সে নবীর হাদিস অস্বীকারকারী এবং ফাসেক।

কথা ক্লিয়ার নাকি ভেজাল আছে 🤣?

ইবনে তাইমিয়া ও ইহুদিবাদী আক্বীদা বা দর্শন

ইবনে তাইমিয়া তার বিভিন্ন বিকৃতি ও ভুল দর্শনের ক্ষেত্রে ইয়াহুদীদের বিভিন্ন আকিদা – বিশ্বাস নিয়েছেন। সেসমস্ত ইয়াহুদী আকিদার কারণেই আজ মুসলমানরা শতধা বিভক্ত এবং নিজেরা রক্তারক্তিতে লিপ্ত।

তাইমী দর্শনের কতটুকু কোন কোন ইয়াহুদী দার্শনিকের কাছ থেকে নিয়েছে এটার উপর আলাদা থিসিস হওয়া প্রয়োজন। মৌলিক বিষয়গুলোর তুলনামূলক পর্যালোচনা হওয়া প্রয়োজন।

দেহবাদী আকিদার ক্ষেত্রে ইবনে তাইমিয়ার চিন্তা-চেতনার অধিকাংশই ইয়াহুদীদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আহলে সুন্নতের বহু উলামায়ে কেরাম এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন যে, দেহবাদের মূল ইসলাম নয়। ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের থেকে আসা ইসরাইলী বর্ণনা ও চিন্তা-চেতনা মূলত: দেহবাদের মূল। ইবনে তাইমিয়ার জীবনের বড় একটা অংশ কেটেছে এই ইয়াহুদীবাদী তাজসিমি (দেহবাদী) আকিদা প্রতিষ্ঠার জন্য।

এমনকি কুরআনে যে আছে, ইয়াহুদীরা বলত, জাহান্নামের আগুন আমাদেরকে খুব অল্প সময় স্পর্শ করবে। জীবনের শেষ দিকে এসে ইবনে তাইমিয়া কাছাকাছি আকিদা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। জাহান্নামের আগুন শেষ হওয়ার মত জঘন্য কুফুরী আকিদার পক্ষে কাজ করেছেন।

এছাড়া কোন না কোন মাখলুককে কাদীম বা অবিনশ্বর বলা, আল্লাহর সত্ত্বায় বিভিন্ন নশ্বর বিষয় সৃষ্টি হওয়ার মতো জঘন্য আকিদার পেছনে কাজ করেছেন তিনি।

ইবনে তাইমিয়ার অনুসারীরাও একইভাবে ইয়াহুদীবাদী আকিদা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস কাজ করছে। সালাফী শায়খ হামুদ বিন আব্দুল্লাহ তুয়াইজেরি কিতাব লিখেছে, আকিদাতু আহলিল ইমান ফিল খালকি আদম আলা সুরতির রহমান। আল্লাহ তায়ালা আদম আ: কে তার নিজের আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। এর পক্ষে তাদের গ্রান্ড মুফতী ইবনে বাজ সমর্থন দিয়েছে। এই আকিদাটি মূলত: হুবহু ইয়াহুদীদের আকিদা। কোন কোন দেহবাদী আলিম তো বলেছে, আল্লাহ তায়ালা যেহেতু বলেছেন যে, আদম আ: কে তার নিজের আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, এজন্য আদম আ: এর যা যা আছে, আল্লাহরই তাই আছে। তবে আল্লাহর শুধু গুপ্তাঙ্গ আর দাঁড়ি নেই। মায়াজাল্লাহ। এই ধরণের কথা দেহবাদী শিয়া দাউদ জাওয়ারেবী যেমন বলত, একই কথা কাজী আবু বকর ইবনুল আরাবী তার আল-আওয়াসিম মিনাল কাওয়াসিম কিতাবে হাম্বলী আলিম আবু ই’য়ালার ব্যাপারেও এনেছেন। এদের বিরুদ্ধেই মূলত: ইবনুল জাওজী পরবর্তীতে তার দাফউ শুবাহিত তাশবীহ কিতাব লিখেছেন।

আল্লাহর আকার-আকৃতি সাব্যস্ত করে সেটাকে মানুষের মতো বলার জঘন্য এই কুফুরী আকিদাটি মূলত: ইয়াহুদীদের তাওরাতে স্পষ্টভাবে রয়েছে। তাওরাতের সেই বক্তব্যই পরবর্তীতে অন্যরা গ্রহণ করেছে। সালাফী শায়খ এই আকিদা প্রমাণের জন্য যেই কিতাব লিখেছেন, সে কিতাবের উপর ইবনে বাজও সমর্থন দিয়ে প্রশংসাবাণী লিখেছে। এই কিতাবে স্পষ্টভাবে তারা ইয়াহুদীদের তাওরাত থেকে দলিল দিয়ে দেখিয়েছে যে, এই আকিদা শুধু আমাদের নয়, তাওরাতেও আছে।

মূল বিষয় হলো, ইয়াহুদীদের কুফুরী আকিদা – বিশ্বাস ধীরে ধীরে মুসলমানদের মূল ধারায় ঢুকিয়ে তাদের আকিদা-বিশ্বাসকে নষ্টের এই ষড়যন্ত্র বেশ পুরনো। তবে বর্তমানে যারা ইবনে তাইমিয়া ও ইবনে আব্দিল ওয়াহহাবের দর্শনকে একমাত্র সঠিক ইসলাম হিসেবে উপস্থাপন করছে, তাদের ব্যাপারে এতটুকু খোঁজ-খবর নেয়া জ্বরুরি যে, তাদের চিন্তা-চেতনার সাথে ইয়াহুদী আকিদার যোগসূত্র কতটুকু।

ইবনে তাইমিয়ার জীবদ্দশাতেই তার কিছু ছাত্রকে এজন্য শাস্তি দেয়া হয়েছে যে, তারা বিশ্বাস রাখত ইয়াহুদীদের তাওরাত মৌলিকভাবে সংরক্ষিত আছে। রাহেবরা শুধু অর্থগত বা ব্যাখ্যার দিক থেকে বিকৃত করেছে। এই আকিদার কারণে জনসম্মুখে তাদের শাস্তিও দেয়া হয়েছিল সে সময়।

এজন্য একেবারে গোড়া থেকে অনুসন্ধান করা জ্বরুরি যে, এই দেহবাদী ইয়াহুদী এজেন্ডার সাথে নজদী-তাইমীদের যোগসূত্র কী কী বিষয়ে এবং কতটুকু।

একথা অনস্বীকার্য যে, কারও হাতে ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান বা অন্য ধর্মের কেউ মুসলমান হওয়া প্রশংসনীয় বিষয়। কিন্তু আপনি যদি এরপর সারাজীবন এই জাতীয় আকিদা বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যান, তখন আপনার ব্যাপারে সন্দেহ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।

ইবনে তাইমিয়ার জীবনী যারা লিখেছেন, এর ভেতরে তারই ছাত্র আবু হাফস উমর বিন আলী আল-বাজ্জার এর লেখা আল-আ’লামুল আলিয়্যাহ ফি মানাকিবি শাইখিল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ কিতাবটি শুরুর দিকের কিতাব। এখানে ইবনে তাইমিয়ার জীবনের একদম শুরু দিকের বিষয় নিতে তিনি আলোচনা করেছেন।

ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র লিখেছেন,

” ইবনে তাইমিয়া যখন ছোট ছিলেন তখন তিনি মকতবে যেতেন। মকতবে যাওয়ার পথে একজন ইয়াহুদীর বাড়ী ছিলো। সেই ইয়াহুদী ইবনে তাইমিয়ার কাছে বিভিন্ন মাসআলা – মাসাইল জিজ্ঞাসা করত। কারণ, ছোট বয়সে তার বুদ্ধিমত্তা ও মেধার বিষয়টি স্পষ্ট ছিলো। যখনই ইয়াহুদী ইবনে তাইমিয়াকে প্রশ্ন করত, তিনি সাথে সাথে এর উত্তর দিতেন। ফলে ইয়াহুদী আশ্চর্য্য হয়ে যেত। ইবনে তাইমিয়া যখনই তার কাছ দিয়ে যেতেন এমন কিছু বলতেন, যাতে ইয়াহুদীর আকিদা – বিশ্বাসের খন্ডন হয়। এক সময় সে ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার ইসলামী জিন্দেগী সুন্দর ছিলো”

এই ঘটনা উল্লেখ করার দ্বারা কখনও এটি উদ্দেশ্য নয় যে, ঐ ব্যক্তির ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন তোলা কিংবা ইবনে তাইমিয়ার হাতে একজন ইয়াহুদী তার ছোট বয়সে মুসলমান হয়েছে এটাকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা। বরং এই ঘটনার মূল উদ্দেশ্য হলো, ইয়াহুদীদের বিভিন্ন সংশয় ও প্রশ্নের সাথে ইবনে তাইমিয়া একেবারে বাচ্চা বয়স থেকে পরিচিত ছিলেন। মকতবে যাওয়ার পথে তাদের চিন্তা-চেতনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইয়াহুদীদের আকিদা – বিশ্বাসের সাথে এতো ছোট বয়সে পরিচিত হওয়ার পরও পরবর্তীতে কেন ইয়াহুদী দার্শনিকদের বিভিন্ন দর্শন ইসলামী আকিদায় ঢোকানোর প্রয়োজন অনুভব করলেন? সারা জীবন কেন ইয়াহুদীদের বিভিন্ন আকিদা-বিশ্বাস, দেহবাদী চিন্তা-চেতনা প্রতিষ্ঠার পেছনে কাজ করে গেলেন? এগুলো আমাদের সামনে নানা প্রশ্ন তৈরি করে। যেগুলোর সদুত্তর বিস্তারিত গবেষণা আকারে আসা জ্বরুরি।

মিলাদুন্নবী থেকে সিরাতুন্নবী কেনো?

আমরা অনেক সময় অনেক বিষয়কে খুব ছোট মনে করি। বিষয়গুলোকে স্বাভাবিক মনে করি। অথচ ভালোভাবে অনুসন্ধান করলে সেখান থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বেরিয়ে আসে, যা আমাদেরকে চমকে দেয়। আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হওয়া অনেক বিষয় মূলত: ইবলিশীয় গভীর ষড়ষন্ত্রের অংশ। যদিও আমরা বিষয়গুলোকে সেভাবে চিন্তা করি না।

মিলাদুন্নবীর কঠিন বিরোধিতা ও সিরাতুন্নবীর দিকে যাওয়ার পেছনেও এমনই একটি বড় ধরণের ইবলিশী এজেন্ডা আছে। যা হয়ত আমরা অনেকে না বুঝেই গা ভাসিয়েছি।

মূল বিষয় হলো, নজদের খারেজী ইবনে আব্দিল ওয়াহহাবের মূলত: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সব ধরণের দুশমনি লালন করতো। তার এই দুশমনির একটা অংশ এও ছিলো যে, সে মনে করত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশ বছর বয়স হওয়ার আগে বা দুনিয়াতে নবুওয়াত প্রকাশের আগে কুরাইশদের দ্বীনের উপর ছিলেন। অর্থাৎ মুশরিক ছিলেন। নাউজুবিল্লাহ।তাদের মতে, নবুওয়াত প্রাপ্তির আগে যেহেতু তিনি কুরাইশদের ধর্মের উপর ছিলেন, এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম থেকে নবুওয়াত প্রাপ্তি পর্যন্ত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের জন্য ওহী আসার পর থেকে সিরাত গুরুত্বপূর্ণ।

অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু এর নবুওয়াত হযরত আদম আ: এর সৃষ্টির আগেই দেয়া হয়েছে। দুনিয়াতে শুধু প্রকাশিত হয়েছে চল্লিশ বছরে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, নবীজীর নবুওয়াতের স্বাক্ষ্য অন্য সকল নবীর কাছ থেকে নিয়েছেন।

আর এই কারণেই সালাফীদের মাঝে সিরাত উৎসব, সিরাত ওয়ার্কশপ, সিরাতুন্নবী মাহফিল ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ হলেও মিলাদুন্নবী সবচেয়ে বড় বিদয়াত। উপরের এই মালউন আকিদার কারণেই মূলত: রাসূল সাল্লাল্লহু আালাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মবৃত্তান্তের সাথে এদের বিশেষ শত্রুতা। এমনকি তারা এই শিরোনামই সহ্য করতে পারে না। শুনলেই গাত্রদাহ শুরু হয়।

যে মনে করে নবুওয়াত প্রকাশের পূর্বে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিক ছিলেন বা কুরাইশদের ধর্মের উপর ছিলেন, তার উপর কিয়ামত পর্যন্ত শত কোটি লা’নত।

একজন কাসেমী ও ইজহারুল ইসলাম নিয়ে কওমী অঙ্গনের চিন্তাভাবনা

মাওলানা নজরুল ইসলাম কাসেমী মাঃজিঃআঃ

মাওলানা নজরুল ইসলাম কাসেমী, মুফতী ইজহারুল ইসলামসহ কওমী অঙ্গনের যারাই সুন্নী আকীদার পক্ষে কথা বলছেন, তাদেরকেই থামিয়ে দিতে চাইছে কওমীরা নানা অপবাদ ও তোহমতের মাধ্যমে, আফসোস!

সত্য উপলদ্ধি করার পরিবর্তে সত্য উন্মোচনের পথকেই বন্ধ করে দিচ্ছে তারা৷ অথচ কওমীদের মধ্যে পূর্বের মহান আকাবেরগণের মধ্যে অনেকেই সুন্নীয়তের পক্ষে কথা বলে গেছেন। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের পরিচয় বহন করলেও কোথায় যেনো তারা নিজ গন্ডীর ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে।

নিজেদের ভিতর হাজারো দোষত্রুটি, ভুল ও বিতর্কিত ঘটনা থাকার পরেও তারা হকপন্থী সুন্নীভাইদের দিকে আঙ্গুল তুলছে বারংবার। সকল সুন্নি মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার রাস্তা অবরুদ্ধ করছে নানান প্রতিবন্ধকতা মূলক বক্তব্য ও আলোচনার মাধ্যমে।

মুফতি ইজহারুল ইসলাম মাঃজিঃআঃ

খুব ইচ্ছে হয়, আমরা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের ছায়াতলে সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দেশটাকে গড়ি প্রিয়ো রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পথে। যেখানে কেউ কাউকে কটুক্তি করবেনা। থাকবে মহান একটা রাষ্ট্র, দ্বীন ইসলাম, তরিকাহ, তাসাউফ এবং অকৃত্রিম ভালোবাসা সকলের মধ্যে।

কওমী অঙ্গনের মধ্যে যারা সুন্নিয়তের পক্ষে কথা বলেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনঃ-

১। সামসুল হক ফরীদপুরী রহঃ।
২। মাওলানা আমিনুল ইসলাম রহঃ।

জানিনা, কওমী অঙ্গনের এই দ্বৈতনীতির শেষ কোথায়।

মজলিস বা কোন বৈঠকে বসে করণীয় ও বর্জনীয়

নানান ধরনের কাজে কর্মের জন্য প্রতিদিন (পেশাগত, পারিবারিক, সামাজিক) একে অন্যের সঙ্গে আমাদের মিলিত হতে হয়। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে বর্জনীয় কিছু কাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—

১। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে তার স্থানে বসা

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি অন্য কাউকে তার বসার জায়গা থেকে তুলে দিয়ে সেখানে বসবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৬২৬৯)

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তিকে তার বসার জায়গা থেকে তুলে দিয়ে সেখানে কেউ বসবে না। তবে তোমরা বসার জায়গা করে দাও এবং প্রশস্ত করে দাও।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৪৬৫৯)

২। দুজনের মধ্যখানে বসা

রাসুল (সা.) বলেন, ‘কারো জন্য এটা বৈধ নয় যে সে দুই ব্যক্তিকে পৃথক করে দেবে (তাদের মধ্যখানে বসবে) তাদের অনুমতি ছাড়াই।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৫২)

৩। কেউ কোনো প্রয়োজনে উঠে গেলে তার স্থানে বসা

রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ তার আসন থেকে উঠে গিয়ে পুনরায় ফিরে এলে সে-ই হবে তার বেশি হকদার।’ (মুসলিম, হাদিস : ২১৭৯)

৪। তৃতীয় জনকে বাদ দিয়ে দুজনে কানে কানে কথা বলা

মহান আল্লাহ বলেন, ‘ওই কানাঘুষা শয়তানের কাজ ছাড়া আর কিছু নয়, যা মুমিনদের দুঃখ দেওয়ার জন্য করা হয়। অথচ তা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। অতএব, মুমিনদের উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা করা।’ (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত : ১০)

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যখন কোথাও তোমরা তিনজন থাকো, তখন একজনকে বাদ দিয়ে দুজনে কানে কানে কথা বলবে না। এতে তার মনে দুঃখ হবে। তোমরা পরস্পর মিশে গেলে, তাহলে তা করাতে দোষ নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৬২৯০)

✅ পার্শ্ববর্তী ব্যাক্তির অনুমতি সাপেক্ষে কানে কানে পরামর্শ করা

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা তিনজন থাকো, তখন তৃতীয় ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া একজনকে বাদ দিয়ে দুজনে গোপনে পরামর্শ কোরো না। কেননা সেটি তাকে দুঃখিত করবে।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৬৩৩৮)

৫। হাতে বা দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসা

শারিদ ইবনে সুওয়াইদ (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আমি আমার বাঁ হাত পিঠে নিয়ে তার পাতার ওপর বসেছিলাম। তিনি বলেন, ‘তুমি কি তাদের মতো বসছ, যারা অভিশপ্ত?’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৪৮)

৬। মজলিসে হাসাহাসি করা

রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বেশি হাসবে না। কারণ বেশি হাসি অন্তরের মৃত্যু ঘটায়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৯৩)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ কেউ ওই কাজের জন্য হাসে, যে কাজ সে নিজেও করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৯৪২)

৭। গুপ্তচরবৃত্তি ও দোষত্রুটি তালাশ করা

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা কারো প্রতি কুধারণা পোষণ কোরো না। কেননা কুধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। একে অন্যের ছিদ্রান্বেষণ কোরো না, একে অন্যের ব্যাপারে মন্দ কথায় কান দিয়ো না এবং একে অন্যের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ কোরো না, বরং আল্লাহর বান্দারা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৪)

৭। ইসলাম বিরোধী বৈঠকে যোগদান

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনি কোরআনে তোমাদের প্রতি এই আদেশ দিয়েছেন যে যখন তোমরা মানুষের কাছ থেকে কোরআনের আয়াত নিয়ে অবিশ্বাস ও বিদ্রুপ শুনবে, তখন তাদের সঙ্গে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় লিপ্ত হয়। অন্যথায় তোমরাও তাদের সদৃশ গণ্য হবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের জাহান্নামে একত্র করবেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৪০)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

জাযাকাল্লাহু খাইরান বলার গুরুত্ব ও ফজিলত কি?

জাযাকাল্লাহ পুরুষকে বলা হয়। জাযাকিল্লাহ মহিলাকে বলা হয়। খাইরান অর্থ উত্তম। জাযাকাল্লাহ অর্থ, আল্লাহ তোমাকে বিনিময় দান করুক।

শুধুমাত্র জাযাকাল্লাহ বা জাযাকিল্লাহ দ্বারাও দু’আ হয়। তবে জাযাকাল্লাহু/জাযাকিল্লাহু খাইরান বললে অর্থে আরেকটু উত্তমতা আসে। তাই সময় সুযোগ থাকলে পূর্ণ দু’আ বলাই উত্তম। কেউ শুধুমাত্র জাযাকাল্লাহ/জাযাকিল্লাহ বললেও হবে।

১। আল্লাহ তা’আলা বলেন, وَإِذَا حُيِّيْتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّواْ بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا ♥ আর তোমাদেরকে যদি কেউ দোয়া করে, তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর; তারচেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।(সূরা নিসা-৮৬)

২। হযরত উসামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার প্রতি যদি কেউ কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তখন যদি তুমি তাকে জাযাকাল্লাহ খাইরান (আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন) বল তাহলেই তুমি তার যথাযোগ্য প্রশংসা করলে। – জামে তিরমিযী, হাদীস : ২০৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৪১৩

৩। অন্য হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন,. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি তোমাদের সাথে কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তাহলে তোমরাও তার সাথে কৃতজ্ঞতার আচরণ কর। (তাকে কিছু হাদিয়া দাও।) যদি কিছু দিতে না পার অন্তত তার জন্য দুআ কর। যাতে সে বুঝতে পারে যে, তুমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। -সুনানে আবু দাউদ; আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারী ২১৬

৪। হাদিস শরিফে এসেছে, একবার উসাইদ বিন হুযাইর রাযি. কোন এক প্রেক্ষিতে শুকরিয়া স্বরূপ রাসূল ﷺ -কে বললেন, ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ বা ‘জাযাকাল্লাহু আত্বইয়াবাল জাযা’। উত্তরে তিনি বললেন, ‘ফা জাযাকুমুল্লাহু খায়রান’ বা ‘ফা’জাযাকাল্লাহু আত্বইয়াবাল জাযা’। (নাসাই কুবরা ৮০২৪ ইবনে হিববান ৭২৭৭  মুসতাদরাক হাকিম ৪/৭৯)

৫। তাছাড়া ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, لَوْ يَعْلَمُ أَحَدُكُمْ مَا لَهُ فِي قَوْلِهِ لِأَخِيهِ : جَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا , لَأَكْثَرَ مِنْهَا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ ❤️ তোমরা যদি জানতে, তোমাদের ভাইদের জন্যে তোমাদের বলা কথা ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ এর মধ্যে কী কল্যাণ নিহিত রয়েছে, তাহলে একে অন্যের সাথে প্রতিযোগী হয়ে বেশি বেশি ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলতে। (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ ৫/৩২২)

সতর্ককতা–

আমরা কখনো শুধুমাত্র ‘জাযাকাল্লাহু’ বলবো না। বরং ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলবো। কারণ ‘জাযাকাল্লাহু’ দ্বারা প্রতিদান ভালোও হতে পারে আবার মন্দও হতে পারে। তাই ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলবো। যখন কেউ জাযাক আল্লাহু খাইরান – বলে এর জবাবেঃ ‘ওয়া আনতুম ফা জাযাকুম আল্লাহ খাইরান ‘ (এবং আল্লাহ আপনাকেও উত্তম প্রতিদান দিন) বলতে হয়। [বুখারী,হাঃ ৩৩৬; তিরমিযী, হাঃ২০৩৫ & সহীহ ইবনে হিব্বান, হাঃ ৬২৩১]

আপনি কি জানেন, ﺟَﺰَﺍﻙَ ﺍﻟﻠّٓﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ (জাযাকাল্লাহু খাইরান)-এর অর্থ কি?

এর বেশ সুন্দর কয়েকটি অর্থ রয়েছে।

১। ﺧﻴﺮ ( খাইর) শব্দটি সে সমস্ত বিষয়কে বুঝায় যা আল্লাহর নিকট প্রিয়। তাই “খাইর” শব্দের মাধ্যমে সবরকমের কল্যাণ কামনা করা হয়।

২। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ আপনাকে জান্নাত এবং জান্নাতে তাঁর দিদার দ্বারা সৌভাগ্যবান করুন।

৩। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ আপনাকে কাফিরদের স্থান জাহান্নাম থেকে হেফাজত করুন।

৪। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ যেন আপনাকে সিরাতে মুস্তাক্বিম তথা সরল পথে পরিচালিত করেন।

৫। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ যেন আপনার উপর কোন অভিশপ্ত শয়তানকে চাপিয়ে না দেন।

৬। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ যেন আপনার রিজিকের মধ্যে বরকত দান করেন।

৭। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ শেষ দিবস পর্যন্ত আল্লাহ যেন আপনাকে মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহারকারী করেন।

৮। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ যেন আপনাকে রাসূলের সুন্নাতের অনুসারী করেন।

৯। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ আপনাকে নেক সন্তান দান করুন।

১০। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” আল্লাহ আপনাকে সবরকম কল্যাণ দান করুন।

তবে আমরা বাক্যটির শাব্দিক অর্থ করি, “আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন” বলে।

কাউকে “Thank you” বলার পরিবর্তে “জাযাকাল্লাহু খাইরান” বলা শুরু করেছি বেশ কয়েক বছর আগ থেকে। কিন্তু, ব্যাপারটা যেভাবে বুঝলাম, জানলাম এবং এখন কাউকে কথাটা বলার সময় মনের যে অবস্থা হয় বা ভবিষ্যতে হবেও ইনশাআল্লাহ, অতীতে তা কখনোই ছিল না। এজন্যই বোধহয় “যে জানে আর যে জানে না” তারা কখনোই সমান নয়।