জাযাকাল্লাহু খাইরান বলার গুরুত্ব ও ফজিলত কি?

জাযাকাল্লাহ পুরুষকে বলা হয়। জাযাকিল্লাহ মহিলাকে বলা হয়। খাইরান অর্থ উত্তম। জাযাকাল্লাহ অর্থ, আল্লাহ তোমাকে বিনিময় দান করুক।

শুধুমাত্র জাযাকাল্লাহ বা জাযাকিল্লাহ দ্বারাও দু’আ হয়। তবে জাযাকাল্লাহু/জাযাকিল্লাহু খাইরান বললে অর্থে আরেকটু উত্তমতা আসে। তাই সময় সুযোগ থাকলে পূর্ণ দু’আ বলাই উত্তম। কেউ শুধুমাত্র জাযাকাল্লাহ/জাযাকিল্লাহ বললেও হবে।

১। আল্লাহ তা’আলা বলেন, وَإِذَا حُيِّيْتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّواْ بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا ♥ আর তোমাদেরকে যদি কেউ দোয়া করে, তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর; তারচেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।(সূরা নিসা-৮৬)

২। হযরত উসামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার প্রতি যদি কেউ কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তখন যদি তুমি তাকে জাযাকাল্লাহ খাইরান (আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন) বল তাহলেই তুমি তার যথাযোগ্য প্রশংসা করলে। – জামে তিরমিযী, হাদীস : ২০৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৪১৩

৩। অন্য হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন,. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি তোমাদের সাথে কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তাহলে তোমরাও তার সাথে কৃতজ্ঞতার আচরণ কর। (তাকে কিছু হাদিয়া দাও।) যদি কিছু দিতে না পার অন্তত তার জন্য দুআ কর। যাতে সে বুঝতে পারে যে, তুমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। -সুনানে আবু দাউদ; আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারী ২১৬

৪। হাদিস শরিফে এসেছে, একবার উসাইদ বিন হুযাইর রাযি. কোন এক প্রেক্ষিতে শুকরিয়া স্বরূপ রাসূল ﷺ -কে বললেন, ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ বা ‘জাযাকাল্লাহু আত্বইয়াবাল জাযা’। উত্তরে তিনি বললেন, ‘ফা জাযাকুমুল্লাহু খায়রান’ বা ‘ফা’জাযাকাল্লাহু আত্বইয়াবাল জাযা’। (নাসাই কুবরা ৮০২৪ ইবনে হিববান ৭২৭৭  মুসতাদরাক হাকিম ৪/৭৯)

৫। তাছাড়া ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, لَوْ يَعْلَمُ أَحَدُكُمْ مَا لَهُ فِي قَوْلِهِ لِأَخِيهِ : جَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا , لَأَكْثَرَ مِنْهَا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ ❤️ তোমরা যদি জানতে, তোমাদের ভাইদের জন্যে তোমাদের বলা কথা ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ এর মধ্যে কী কল্যাণ নিহিত রয়েছে, তাহলে একে অন্যের সাথে প্রতিযোগী হয়ে বেশি বেশি ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলতে। (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ ৫/৩২২)

সতর্ককতা–

আমরা কখনো শুধুমাত্র ‘জাযাকাল্লাহু’ বলবো না। বরং ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলবো। কারণ ‘জাযাকাল্লাহু’ দ্বারা প্রতিদান ভালোও হতে পারে আবার মন্দও হতে পারে। তাই ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলবো। যখন কেউ জাযাক আল্লাহু খাইরান – বলে এর জবাবেঃ ‘ওয়া আনতুম ফা জাযাকুম আল্লাহ খাইরান ‘ (এবং আল্লাহ আপনাকেও উত্তম প্রতিদান দিন) বলতে হয়। [বুখারী,হাঃ ৩৩৬; তিরমিযী, হাঃ২০৩৫ & সহীহ ইবনে হিব্বান, হাঃ ৬২৩১]

আপনি কি জানেন, ﺟَﺰَﺍﻙَ ﺍﻟﻠّٓﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ (জাযাকাল্লাহু খাইরান)-এর অর্থ কি?

এর বেশ সুন্দর কয়েকটি অর্থ রয়েছে।

১। ﺧﻴﺮ ( খাইর) শব্দটি সে সমস্ত বিষয়কে বুঝায় যা আল্লাহর নিকট প্রিয়। তাই “খাইর” শব্দের মাধ্যমে সবরকমের কল্যাণ কামনা করা হয়।

২। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ আপনাকে জান্নাত এবং জান্নাতে তাঁর দিদার দ্বারা সৌভাগ্যবান করুন।

৩। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ আপনাকে কাফিরদের স্থান জাহান্নাম থেকে হেফাজত করুন।

৪। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ যেন আপনাকে সিরাতে মুস্তাক্বিম তথা সরল পথে পরিচালিত করেন।

৫। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ যেন আপনার উপর কোন অভিশপ্ত শয়তানকে চাপিয়ে না দেন।

৬। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ যেন আপনার রিজিকের মধ্যে বরকত দান করেন।

৭। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ শেষ দিবস পর্যন্ত আল্লাহ যেন আপনাকে মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহারকারী করেন।

৮। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ যেন আপনাকে রাসূলের সুন্নাতের অনুসারী করেন।

৯। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ আপনাকে নেক সন্তান দান করুন।

১০। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” আল্লাহ আপনাকে সবরকম কল্যাণ দান করুন।

তবে আমরা বাক্যটির শাব্দিক অর্থ করি, “আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন” বলে।

কাউকে “Thank you” বলার পরিবর্তে “জাযাকাল্লাহু খাইরান” বলা শুরু করেছি বেশ কয়েক বছর আগ থেকে। কিন্তু, ব্যাপারটা যেভাবে বুঝলাম, জানলাম এবং এখন কাউকে কথাটা বলার সময় মনের যে অবস্থা হয় বা ভবিষ্যতে হবেও ইনশাআল্লাহ, অতীতে তা কখনোই ছিল না। এজন্যই বোধহয় “যে জানে আর যে জানে না” তারা কখনোই সমান নয়।

Author: mehedihassan2017

I m a Muslim (sunni)

Leave a comment