ইবনে তাইমিয়া ও ইহুদিবাদী আক্বীদা বা দর্শন

ইবনে তাইমিয়া তার বিভিন্ন বিকৃতি ও ভুল দর্শনের ক্ষেত্রে ইয়াহুদীদের বিভিন্ন আকিদা – বিশ্বাস নিয়েছেন। সেসমস্ত ইয়াহুদী আকিদার কারণেই আজ মুসলমানরা শতধা বিভক্ত এবং নিজেরা রক্তারক্তিতে লিপ্ত।

তাইমী দর্শনের কতটুকু কোন কোন ইয়াহুদী দার্শনিকের কাছ থেকে নিয়েছে এটার উপর আলাদা থিসিস হওয়া প্রয়োজন। মৌলিক বিষয়গুলোর তুলনামূলক পর্যালোচনা হওয়া প্রয়োজন।

দেহবাদী আকিদার ক্ষেত্রে ইবনে তাইমিয়ার চিন্তা-চেতনার অধিকাংশই ইয়াহুদীদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আহলে সুন্নতের বহু উলামায়ে কেরাম এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন যে, দেহবাদের মূল ইসলাম নয়। ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের থেকে আসা ইসরাইলী বর্ণনা ও চিন্তা-চেতনা মূলত: দেহবাদের মূল। ইবনে তাইমিয়ার জীবনের বড় একটা অংশ কেটেছে এই ইয়াহুদীবাদী তাজসিমি (দেহবাদী) আকিদা প্রতিষ্ঠার জন্য।

এমনকি কুরআনে যে আছে, ইয়াহুদীরা বলত, জাহান্নামের আগুন আমাদেরকে খুব অল্প সময় স্পর্শ করবে। জীবনের শেষ দিকে এসে ইবনে তাইমিয়া কাছাকাছি আকিদা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। জাহান্নামের আগুন শেষ হওয়ার মত জঘন্য কুফুরী আকিদার পক্ষে কাজ করেছেন।

এছাড়া কোন না কোন মাখলুককে কাদীম বা অবিনশ্বর বলা, আল্লাহর সত্ত্বায় বিভিন্ন নশ্বর বিষয় সৃষ্টি হওয়ার মতো জঘন্য আকিদার পেছনে কাজ করেছেন তিনি।

ইবনে তাইমিয়ার অনুসারীরাও একইভাবে ইয়াহুদীবাদী আকিদা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস কাজ করছে। সালাফী শায়খ হামুদ বিন আব্দুল্লাহ তুয়াইজেরি কিতাব লিখেছে, আকিদাতু আহলিল ইমান ফিল খালকি আদম আলা সুরতির রহমান। আল্লাহ তায়ালা আদম আ: কে তার নিজের আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। এর পক্ষে তাদের গ্রান্ড মুফতী ইবনে বাজ সমর্থন দিয়েছে। এই আকিদাটি মূলত: হুবহু ইয়াহুদীদের আকিদা। কোন কোন দেহবাদী আলিম তো বলেছে, আল্লাহ তায়ালা যেহেতু বলেছেন যে, আদম আ: কে তার নিজের আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, এজন্য আদম আ: এর যা যা আছে, আল্লাহরই তাই আছে। তবে আল্লাহর শুধু গুপ্তাঙ্গ আর দাঁড়ি নেই। মায়াজাল্লাহ। এই ধরণের কথা দেহবাদী শিয়া দাউদ জাওয়ারেবী যেমন বলত, একই কথা কাজী আবু বকর ইবনুল আরাবী তার আল-আওয়াসিম মিনাল কাওয়াসিম কিতাবে হাম্বলী আলিম আবু ই’য়ালার ব্যাপারেও এনেছেন। এদের বিরুদ্ধেই মূলত: ইবনুল জাওজী পরবর্তীতে তার দাফউ শুবাহিত তাশবীহ কিতাব লিখেছেন।

আল্লাহর আকার-আকৃতি সাব্যস্ত করে সেটাকে মানুষের মতো বলার জঘন্য এই কুফুরী আকিদাটি মূলত: ইয়াহুদীদের তাওরাতে স্পষ্টভাবে রয়েছে। তাওরাতের সেই বক্তব্যই পরবর্তীতে অন্যরা গ্রহণ করেছে। সালাফী শায়খ এই আকিদা প্রমাণের জন্য যেই কিতাব লিখেছেন, সে কিতাবের উপর ইবনে বাজও সমর্থন দিয়ে প্রশংসাবাণী লিখেছে। এই কিতাবে স্পষ্টভাবে তারা ইয়াহুদীদের তাওরাত থেকে দলিল দিয়ে দেখিয়েছে যে, এই আকিদা শুধু আমাদের নয়, তাওরাতেও আছে।

মূল বিষয় হলো, ইয়াহুদীদের কুফুরী আকিদা – বিশ্বাস ধীরে ধীরে মুসলমানদের মূল ধারায় ঢুকিয়ে তাদের আকিদা-বিশ্বাসকে নষ্টের এই ষড়যন্ত্র বেশ পুরনো। তবে বর্তমানে যারা ইবনে তাইমিয়া ও ইবনে আব্দিল ওয়াহহাবের দর্শনকে একমাত্র সঠিক ইসলাম হিসেবে উপস্থাপন করছে, তাদের ব্যাপারে এতটুকু খোঁজ-খবর নেয়া জ্বরুরি যে, তাদের চিন্তা-চেতনার সাথে ইয়াহুদী আকিদার যোগসূত্র কতটুকু।

ইবনে তাইমিয়ার জীবদ্দশাতেই তার কিছু ছাত্রকে এজন্য শাস্তি দেয়া হয়েছে যে, তারা বিশ্বাস রাখত ইয়াহুদীদের তাওরাত মৌলিকভাবে সংরক্ষিত আছে। রাহেবরা শুধু অর্থগত বা ব্যাখ্যার দিক থেকে বিকৃত করেছে। এই আকিদার কারণে জনসম্মুখে তাদের শাস্তিও দেয়া হয়েছিল সে সময়।

এজন্য একেবারে গোড়া থেকে অনুসন্ধান করা জ্বরুরি যে, এই দেহবাদী ইয়াহুদী এজেন্ডার সাথে নজদী-তাইমীদের যোগসূত্র কী কী বিষয়ে এবং কতটুকু।

একথা অনস্বীকার্য যে, কারও হাতে ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান বা অন্য ধর্মের কেউ মুসলমান হওয়া প্রশংসনীয় বিষয়। কিন্তু আপনি যদি এরপর সারাজীবন এই জাতীয় আকিদা বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যান, তখন আপনার ব্যাপারে সন্দেহ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।

ইবনে তাইমিয়ার জীবনী যারা লিখেছেন, এর ভেতরে তারই ছাত্র আবু হাফস উমর বিন আলী আল-বাজ্জার এর লেখা আল-আ’লামুল আলিয়্যাহ ফি মানাকিবি শাইখিল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ কিতাবটি শুরুর দিকের কিতাব। এখানে ইবনে তাইমিয়ার জীবনের একদম শুরু দিকের বিষয় নিতে তিনি আলোচনা করেছেন।

ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র লিখেছেন,

” ইবনে তাইমিয়া যখন ছোট ছিলেন তখন তিনি মকতবে যেতেন। মকতবে যাওয়ার পথে একজন ইয়াহুদীর বাড়ী ছিলো। সেই ইয়াহুদী ইবনে তাইমিয়ার কাছে বিভিন্ন মাসআলা – মাসাইল জিজ্ঞাসা করত। কারণ, ছোট বয়সে তার বুদ্ধিমত্তা ও মেধার বিষয়টি স্পষ্ট ছিলো। যখনই ইয়াহুদী ইবনে তাইমিয়াকে প্রশ্ন করত, তিনি সাথে সাথে এর উত্তর দিতেন। ফলে ইয়াহুদী আশ্চর্য্য হয়ে যেত। ইবনে তাইমিয়া যখনই তার কাছ দিয়ে যেতেন এমন কিছু বলতেন, যাতে ইয়াহুদীর আকিদা – বিশ্বাসের খন্ডন হয়। এক সময় সে ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার ইসলামী জিন্দেগী সুন্দর ছিলো”

এই ঘটনা উল্লেখ করার দ্বারা কখনও এটি উদ্দেশ্য নয় যে, ঐ ব্যক্তির ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন তোলা কিংবা ইবনে তাইমিয়ার হাতে একজন ইয়াহুদী তার ছোট বয়সে মুসলমান হয়েছে এটাকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা। বরং এই ঘটনার মূল উদ্দেশ্য হলো, ইয়াহুদীদের বিভিন্ন সংশয় ও প্রশ্নের সাথে ইবনে তাইমিয়া একেবারে বাচ্চা বয়স থেকে পরিচিত ছিলেন। মকতবে যাওয়ার পথে তাদের চিন্তা-চেতনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইয়াহুদীদের আকিদা – বিশ্বাসের সাথে এতো ছোট বয়সে পরিচিত হওয়ার পরও পরবর্তীতে কেন ইয়াহুদী দার্শনিকদের বিভিন্ন দর্শন ইসলামী আকিদায় ঢোকানোর প্রয়োজন অনুভব করলেন? সারা জীবন কেন ইয়াহুদীদের বিভিন্ন আকিদা-বিশ্বাস, দেহবাদী চিন্তা-চেতনা প্রতিষ্ঠার পেছনে কাজ করে গেলেন? এগুলো আমাদের সামনে নানা প্রশ্ন তৈরি করে। যেগুলোর সদুত্তর বিস্তারিত গবেষণা আকারে আসা জ্বরুরি।

Author: mehedihassan2017

I m a Muslim (sunni)

Leave a comment