থার্টিফার্স্ট নাইট ! ইসলাম কি বলে?

পবিত্র কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ পাক বলেন

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوا الۡیَہُوۡدَ وَ النَّصٰرٰۤی اَوۡلِیَآءَ ۘؔ بَعۡضُہُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَلَّہُمۡ مِّنۡکُمۡ فَاِنَّہٗ مِنۡہُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ
হে মুমিনগণ, ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়াত দেন না। (সূরা মায়েদা – ৫১)

খ্রিস্টবর্ষের ৩১ শে ডিসেম্বর রাত ১২ টা ১ মিনিটকে থার্টিফার্স্ট হিসাবে উদযাপন করা হয়। পুরনো বছরকে বিদায় জানানো ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উপলক্ষে নেশা ও অবৈধ যৌনতার উন্মাদনায় মেতে উঠে মানবসন্তানেরা। অপচয় ও অপব্যয়ের প্লাবনে ভাসে একেকটি আয়োজন। ইসলামি জীবন বিধান অনুযায়ী একাজগুলো মারাত্মক অপরাধ। সারাবিশ্বের মুসলিম মনীষীগণ এ দিবস পালনের অপসংস্কৃতিকে হারাম বলে অভিহিত করেছেন।

✅ থার্টিফার্স্ট নাইটের উৎপত্তি

খ্রিস্টপূর্ব ’৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন। পরবর্তীতে ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তিত হয় ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে। এই ক্যালেন্ডার চালু করে খৃস্টানদের তথাকথিত ধর্মযাজক, (যার বিবাহ বহির্ভূত একটি সন্তান ছিল) পোপ গ্রেগরি। ১৫৮২ খৃষ্টাব্দ থেকে পোপ গ্রেগরির ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পাকাপোক্তভাবে ১লা জানুয়ারি (থার্টিফার্স্ট নাইট) নববর্ষ পালনের রেওয়াজ শুরু হয়। যার সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের কোন সম্পর্ক নেই।

✅ বাংলাদেশে প্রসার কখন থেকে

বাংলাদেশে ২০০০ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর মধ্যরাতের মিলেনিয়াম বা সহস্রাব্দ পালনের মধ্য দিয়ে। এরপর এ অপসংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার ঘটে। বিত্তশালী ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের যুবক-যুবতীদের মধ্যে ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এ রাতে নতুন বর্ষে পদার্পন উপলক্ষে বেহায়া-বেলেল্লাপনার সাগরে হারিয়ে যায় যুবক যুবতিরা। আমাদের সমাজে সংঘটিত পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হয়।
এ দিবস পালনের ক্ষেত্রে যা যা ঘটে—

🔥এক. বিধর্মীদের সঙ্গে সাদৃশ্য

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের রীতি চালু হয়েছে খ্রিষ্ট জগতে। সুতরাং এ দিবস পালনের মাধ্যমে বিধর্মীদের সাদৃশ্য অর্জন করা হয়। ইসলামবিজাতীয় সংস্কৃতি পালন করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّ الدِّیۡنَ عِنۡدَ اللّٰہِ الۡاِسۡلَامُ ۟
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ইসলামই একমাত্র মনোনীত দীন। ( আলে ইমরান : ১৯)

তিনি আরও বলেন,
وَ مَنۡ یَّبۡتَغِ غَیۡرَ الۡاِسۡلَامِ دِیۡنًا فَلَنۡ یُّقۡبَلَ مِنۡہُ ۚ وَ ہُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ
‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের অনুসরণ করবে কখনো তার সেই আমল গ্রহণ করা হবে না। আর পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ( আলে ইমরান : ৮৫)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করলো,সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।( আবূ দাউদ – ৪০৩৩ }

🔥দুই. আঁটসাঁট পোশাক পরা : –

তরুণ-তরুণীরা নগ্নপ্রায় পোশাক পরে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ প্রসঙ্গে বলেন,
عَنْ أَبِـىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا
যে নারীরা পোশাক পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ, পরপুরুষকে আকৃষ্ট করে, নিজেরাও আকৃষ্ট হয়, যাদের মাথা বাকা উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের মতো; তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। যদিও তার সুঘ্রাণ দূর-দূরান্ত হতে পাওয়া যাবে। ( মুসলিম : ২১২৮)

🔥তিন. ট্যাটু আঁকা

ট্যাটু বা উল্কি অঙ্কন বলতে বুঝায়, শরীরের চামড়ায় সুঁই বা এ জাতীয় কোনো কিছু দিয়ে ক্ষত করে তাতে বাহারি রং দিয়ে নকশা করা। ইসলামের দৃষ্টিতে ট্যাটু আঁকা হারাম।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : لَعَنَ اللَّهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ والواشمة والمستوشمة
উমর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘যে নারী নকল চুল ব্যবহার করে, অন্য নারীকে নকল চুল এনে দেয়, নিজ শরীরে উল্কি অঙ্কন করে নেয় কিংবা অন্যের শরীরে উল্কি অঙ্কন করে দেয়, আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন।’ ( বুখারী – ৫৯৩৩, ৫৯৩৪, ৫৯৩৭ )

🔥চার. আতশবাজি, পটকাবাজি

আনন্দের আতিশয্যে মধ্যরাত থেকে শুরু হয় আতশবাজি ও পটকাবাজির মহড়া। বিভিন্ন সড়কে, ভবনের ছাদে, প্রকাশ্যে স্থানে উঁচু আওয়াজের পটকা ফুটানো হয়, এ ধরনের অসুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টি হয়। সাধারণ জনগণ বিরক্ত হোন এবং হৃদরোগীরা ভীষণ কষ্ট পান। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন –
وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ بِغَیۡرِ مَا اکۡتَسَبُوۡا فَقَدِ احۡتَمَلُوۡا بُہۡتَانًا وَّ اِثۡمًا مُّبِیۡنًا •
‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়; তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহজাব : ৫৮)

🔥পাঁচ. গান-বাজনা করা :

ডিজে পার্টি, ফ্যাশন শো, ফায়ার প্লে, কনসার্ট, অশ্লীল নৃত্য, ফানুস উড়ানো ইত্যকার কাজগুলো ছাড়া কোনো বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয় না। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَہۡوَ الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ٭ۖ وَّ یَتَّخِذَہَا ہُزُوًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ مُّہِیۡنٌ
‘এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। এদের জন্যে রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি’। (সুরা লুকমান : ৬ )

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন,
عَنْ أَبِي مَالِكٍ الأَشْعَرِيِّ رضي الله تعالى عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ـ لَيَشْرَبَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي الْخَمْرَ يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا، يُعْزَفُ عَلَى رُءُوسِهِمْ بِالْمَعَازِفِ وَالْمُغَنِّيَاتِ يَخْسِفُ اللَّهُ بِهِمُ الأَرْضَ وَيَجْعَلُ مِنْهُمُ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ ‏”‏ ‏.‏
‘আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদের পৃথিবীতে ধসিয়ে দেবেন। (ইবনে মাজাহ : ৪০২০; আবূ দাউদ : ৩৬৮৮)

🔥 ছয়. মাদক সেবন করা :

এ রাতে তরুণ-তরুণীরা মাদক রাজ্যে অবগাহন করে। মাতাল হয়ে ঘটায় নানা অপকর্ম। আল্লাহ তাআলা মাদক থেকে নিষেধ করে বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ • اِنَّمَا یُرِیۡدُ الشَّیۡطٰنُ اَنۡ یُّوۡقِعَ بَیۡنَکُمُ الۡعَدَاوَۃَ وَ الۡبَغۡضَآءَ فِی الۡخَمۡرِ وَ الۡمَیۡسِرِ وَ یَصُدَّکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ وَ عَنِ الصَّلٰوۃِ ۚ فَہَلۡ اَنۡتُمۡ مُّنۡتَہُوۡنَ •
হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। শয়তান মদ, জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না? ( সুরা মায়েদা : ৯০-৯১ )

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ “‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ خَمْرٍ ‏”‏ ‏
আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ শরাব পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (ইবনে মাজাহ : ৩৩৭৬ আহমাদ : ২৬৯৩৮)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ـ ‏”‏ مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ وَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا وَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ رَدْغَةِ الْخَبَالِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا رَدْغَةُ الْخَبَالِ قَالَ ‏”‏ عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ ‏•
আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শরাব পান করে এবং মাতাল হয়, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হয় না। সে মারা গেলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তা‘আলা তার তওবা কবুল করবেন। সে পুনরায় শরাব পানে লিপ্ত হলে কিয়ামতের দিন অল্লাহ তা‘আলা অবশ্যি তাকে ‘‘রাদগাতুল খাবাল’’ পান করাবেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ‘রাদগাতুল খাবাল’ কী? তিনি বলেনঃ জাহান্নামীদের দেহ থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত। (তিরমিযী : ১৮৬২, ইবনে মাজাহ : ৩৩৭৭)

🔥 সাত. যিনা – ব্যভিচার :

এ রাতে যুবক-যুবতীরা অবাধে মেলামেশা ও অপকর্মে লিপ্ত হয়। আবাসিক হোটেল, কমিউনিট সেন্টার, পানশালা, নাচঘর, সমুদ্র সৈকত, নাইট ক্লাবগুলো পরিণত হয় একেকটি অঘোষিত পতিতালয়ে। সতীত্ব হারায় আমাদের উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা। আল্লাহ তাআলা যিনা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হতেও বারণ করে বলেন,
وَ لَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّہٗ کَانَ فَاحِشَۃً ؕ وَ سَآءَ سَبِیۡلًا
‘তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ ( বানি ইসরাইল : ৩২)

¶ যিনার শাস্তি (বোখারি – ৭০৪৭)
فَانْطَلَقْنَا حَتَّى أَتَيْنَا إِلَى ثَقْبٍ مِثْلِ التَّنُّورِ أَعْلَاهُ ضَيِّقٌ وَأَسْفَلَهُ وَاسِعٌ تَتَوَقَّدُ تَحْتَهُ نَارٌ فَإِذَا ارْتَفَعَتِ ارْتَفَعُوا حَتَّى كَادَ أَنْ يَخْرُجُوا مِنْهَا وَإِذَا خَمَدَتْ رَجَعُوا فِيهَا وَفِيهَا رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ فَقُلْتُ: مَا هَذَا؟ قَالَا : وَالَّذِي رَأَيْتَهُ فِي الثَّقْبِ فَهُمُ الزُّنَاةُ •
আমরা সম্মুখের দিকে অগ্রসর হলাম। সেখানে একটি গর্তের নিকট এসে পৌঁছলাম যা তন্দুরের মতো ছিল। এটার উপরিঅংশ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশটি ছিল প্রশস্ত। তার তলদেশে আগুন জ্বলছিল। আগুনের লেলিহান শিখা যখন উপরের দিকে উঠছে, তখন তার ভিতরে যারা রয়েছে তারাও উপরে উঠে আসছে এবং গর্ত হতে বাইরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। আর যখন অগ্নিশিখা কিছু স্তিমিত হচ্ছে তখন তারাও পুনরায় ভিতরের দিকে চলে যাচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে কিছুসংখ্যক উলঙ্গ নারী ও পুরুষ। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এটা কী? আর (আগুনের) তন্দুরে যাদেরকে দেখেছেন তারা হলো যিনাকার (নারী-পুরুষ)।

ইবনু ওমর (রা:) থেকে বর্নিত: নবিজি (সা.) বলেন,
أَلاَ لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ
অবশ্যই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হলে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান। (তিরমিজি – ২১৬৫)

🔥আট. অর্থ অপচয়

এ রাত উপলক্ষে যেসব আয়োজন করা হয়— সর্বক্ষেত্রেই থাকে অর্থ-অপচয়ের প্লাবন। অথচ ইসলাম যাবতীয় অর্থ অপচয় থেকে বারণ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ خُذُوۡا زِیۡنَتَکُمۡ عِنۡدَ کُلِّ مَسۡجِدٍ وَّ کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ۚ اِنَّہٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ •
‘আদম সন্তান, তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরো। খাও, পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালবাসেন না।’
( সুরা আরাফ : ৩১)

اِنَّ الۡمُبَذِّرِیۡنَ کَانُوۡۤا اِخۡوَانَ الشَّیٰطِیۡنِ ؕ وَ کَانَ الشَّیۡطٰنُ لِرَبِّہٖ کَفُوۡرًا •
নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।
(বনী ইসরাইল – ২৭)

🔥নয়. সময়ের অপচয়

ইসলাম ধর্মানুযায়ী মানুষের প্রতিটি মুহূর্তই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করে যে সময়গুলো নষ্ট করছি সেগুলো কি কখনও ফিরে আসবে? এ সময়টিতে আত্মপর্যালোচনা করার প্রয়োজন ছিল, বিগত বছরটা কতটুকু উৎপাদশীল ও কল্যাণকর কাজে ব্যয় করতে পেরেছি? আমি তো দিনদিন মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্চি। সুতরাং আগামীর দিনগুলো যেন এরচেয়েও বেশি ফলপ্রসূ হয়।

🔥দশ. শিরকযুক্ত স্লোগান

এ রাতে বর্ষবরণ উপলক্ষে শিরকযুক্ত স্লোগান দেওয়া হয়। লোকজন বলে,

মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা |
অগ্নি স্নানে সূচি হোক ধরা ||

আনন্দের বন্যায় |
ভেসে যাবে অন্যায় ||

এ স্লোগানে অগ্নিপূজকদের আগুন দ্বারা পবিত্র হওয়ার ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রতিধ্বনিত হয়। যা শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّ اللّٰہَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَکَ بِہٖ ؛
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তার সঙ্গে অংশীস্থাপনকারীকে ক্ষমা করবেন না।’
(সুরা নিসা : ১১৬)

কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে ধ্বংস করতে হয়— তাদের সভ্যতা সংস্কৃতি ঐতিহ্য; তাহলে ধ্বংসযজ্ঞের বাকি কাজ এমনিতেই সমাধা হয়ে যায়। বদলে যায় ইতিহাসের গতিপথ। আমরা সেই বদলে যাওয়া পথেই হাঁটছি। বাস্তবতার নিরিখে যাচাই করলে দেখা যায়— এ দিবস শুধু বাংলাদেশের রাষ্টধর্ম ইসলামের মানদণ্ডেই অবৈধ তা নয় বরং বাঙালি সংস্কৃতিতেও এর কোনো বৈধতা নেই। আজ বাংলাদেশে ধর্মীয় মূল্যবোধ নষ্ট হওয়া ও পারিবারিক বন্ধন টুটে যাওয়ার বড় অনুঘটক হিসেবে এ ধরনের দিবস পালনের দায় এড়ানো যাবে না। সুতরাং থার্টি ফার্স্ট নাইটের মতো অসাংবিধানিক সাস্কৃতিক আগ্রাসন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।


আসুন, আমরা অনতিবিলম্বে ঈমান ও সমাজবিধ্বংসী অপসংস্কৃতি পরিত্যাগ করে আচার-আচরণে, সভ্যতা-সংস্কৃতিতে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে ও সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দিন। আমিন।

Author: mehedihassan2017

I m a Muslim (sunni)

Leave a comment