ইমাম আজম আবু হানিফা রহঃ এর এক অজুতে ফজর নামাজ আদায় টানা ৪০ বছর

ইমাম আজম আবু হানিফা রাহ. সারারাত জেগে ইবাদত করেছেন। এমন বর্ণনা পাওয়া যায় যদিও বা সূত্র নিয়ে যথেষ্ট কিল-কাল আছে। তথাপি , এমন বর্ণনাকে কেন্দ্র করে একজন বক্তা দেখলাম বলতাছেন –

ইমাম আবু হানীফা সারারাত না ঘুমিয়ে ইবাদত করে রাসূল সা: এর সুন্নাহ বিরোধী কাজ করেছেন।

এই বক্তার মূর্খতা ও পড়াশুনার অসারতা দেখে অবাক হলাম। ঘুরেফিরে সাহাবা/ইমামদেরকেই সমালোচনার পাত্র বানাচ্ছেন কেন উনারা? এছাড়া আর কাউকে পান না? ইমাম আবু হানিফা রাহ. ছাড়া কি আর কেহ সারারাত ইবাদ করার হিস্ট্রি নেই? তাহলে শুধু ইমাম আবু হানীফা রাহ. টার্গেট কেন ??

তাহলে নিচের কয়েকটা দলিল দেখে নেই –

১. সাহাবাদের সারারাত্রী ইবাদত

ক. হযরত উমর বিন খাত্তাব রাঃ এর জীবনীতে ইবনে কাসীর রহঃ লিখেনঃ –

كان يصلى بالناس العشاء ثم يدخل بيته فلا يزال يصلى إلى الفجر، وما مات حتى سرد الصوم، (البداية والنهاية-7/135)

তিনি লোকদের সাথে ইশার নামায আদায় করতেন, তারপর ঘরে এসে ফজর পর্যন্ত সারারাত নামায পড়তেন। ধারাবাহিক রোযা রাখা অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন।

সূত্র – আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৭/১৩৫

খ. ইবনে সিরীন রাহ. থেকে বর্ণিত। উসমান রা. এর স্ত্রী বলেন –

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ أَحْمَدَ، ثَنَا أَبُو يَزِيدَ الْقَرَاطِيسِيُّ، ثَنَا أَسَدُ بْنُ مُوسَى، ثَنَا سَلَّامُ بْنُ مِسْكِينٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، قَالَ: قَالَتِ امْرَأَةُ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ حِينَ أَطَافُوا بِهِ يُرِيدُونَ قَتَلَهُ: «إِنْ تَقْتُلُوهُ أَوْ تَتْرُكُوهُ فَإِنَّهُ كَانَ يُحْيِي اللَّيْلَ كُلَّهُ فِي رَكْعَةٍ يَجْمَعُ فِيهَا الْقُرْآنَ»

(حلية الأولياء-1/56)

যখন লোকেরা হযরত উসমান রাঃ এর হত্যার জন্য ঘুরছিল। তখন তাকে হত্যা করুক বা ছেড়ে দিক, তিনি পুরো রাতই নামায পড়তেন, প্রতি রাকআতে এক খতম কুরআন পড়তেন।

সূত্র , হিলয়াতুল আওয়ালিয়া-১/৫৬

গ. নাফে’ থেকে বর্ণিত –

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ أَحْمَدَ، ثَنَا يَزِيدُ الْقَرَاطِيسِيُّ، ثَنَا أَسَدٌ، ثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، ثَنَا ابْنُ جَابِرٍ، حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ بْنُ مُوسَى، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ، أَنَّهُ كَانَ يُحْيِي اللَّيْلَ صَلَاةً ثُمَّ يَقُولُ: يَا نَافِعُ أَسْحَرْنَا؟ فَيَقُولُ: لَا! فَيُعَاوِدُ الصَّلَاةَ، ثُمَّ يَقُولُ: يَا نَافِعُ أَسْحَرْنَا؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ! فَيَقْعُدُ وَيَسْتَغْفِرُ وَيَدْعُو حَتَّى يُصْبِحَ.

ইবনে উমর রাঃ রাত সজাগ থাকতেন নামায পড়ে। তারপর বলতেনঃ হে নাফে! সকাল প্রভাত হয়ে গেছে? নাফে বলতেনঃ নাহ। তখন তিনি আাবার নামাযে রত হতেন। তারপর আবার জিজ্ঞাসা করতেনঃ হে নাফে! সকাল হয়ে গেছে? তিনি বলতেনঃ হ্যাঁ, তারপর তিনি বসে পড়তেন এবং ইস্তিগফার এবং সকাল পর্যন্ত দুআ করতেন।

সূত্র, হিলয়াতুল আওলিয়া-১/৩০৪

এবার আসি ইমাম আজম আবু হানীফা রাহ. এর চল্লিশ বছর এশার ওজু দিয়ে ফজরের নামাজ পড়া প্রসঙ্গে –

১. প্রথম কথা হচ্ছে সাধারণ আক্বলে বলে এটা অসম্ভব। কেননা , তা একজনের মানুষের পক্ষে সাধারণ আকলে বাস্তবিক হওয়া অসম্ভব প্রায়। কেননা, দীর্ঘ চল্লিশ বছরেও যে একবারেত জন্য অসুস্থ হন নাই বা রাত্রে ওজু ভঙ্গ হয়নাই তা মেনে নেওয়াটা দূরহ ব্যাপার।

২. ধারাবাহিক ৪০ বছর এশার ওজু দিয়ে ফজর পড়াত কথাটা যদি মুবালাগাহ হিসেবে হয় বা বা কাসরতে আমল বুঝাতে হয়, তাহলে অসুবিধার নেই। ধরুন, কেউ একজনের প্রায় তাহাজ্জুদ পড়ার আমল রয়েছে। এভাবে সে আকসর দিনে জীবনের শেষ ২০ টা বছর তাহাজ্জুদ পড়েছে। অত:পর, তার ব্যাপারে বলা হলো যে, লোকটি ধারাবাহিক বিশটি বছর তাহাজ্জুদ পড়েছে। এখানে মুবালাগাহ হিসেবে বলা হয়েছে। বিষয়টি, এমন নয় যে সে একদিনও তাহাজ্জুদ মিস করেনি। মানে হচ্ছে সে অধিকাংশ দিন তাহাজ্জুদ পড়েছে।

৩. আল্লাহর পক্ষে সবই সম্ভব। যে আল্লাহ আসহাবে কাহাফ’কে হাজার বছর এক ঘুমে না খাইয়ে, না হাজাত সেরে দীর্ঘদিন রেখেছেন, সেই আল্লাহর পক্ষে তার প্রিয় বান্দাদের মাধ্যমে এমন আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটানো সম্ভব।


আব্দুল কারীম আল-মাদানী
লন্ডন , যুক্তরাজ্য

Author: mehedihassan2017

I m a Muslim (sunni)

Leave a comment