ওজুতে কি গুনাহ মাফ হয়?

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: আমি আল্লাহর প্রিয় রাসূল পাক হজরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: তোমাদের কারো দরজায় যদি নদী থাকে এবং সে দিনে পাঁচ বার তাতে গোসল করে তাহলে তুমি কি তার গায়ে কোন ময়লা দেখতে পাবে? তারা বলেন, ময়লা আবর্জনার চিহ্নও অবশিষ্ট থাকবে না। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, এটা হলো পাঁচটি নামাজের উদাহরণ যার দ্বারা আল্লাহ্ পাপ মোচন করে দেন।

উৎস: সহিহ্ বুখারী শরীফ, হাদিস: ৫২৮।

হজরত উসমান বিন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: আল্লাহর প্রিয় রাসূল পাক হজরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি ভালোভাবে ওযু করবে, তার শরীর থেকে গুনাহ্ বের হয়ে যাবে, এমনকি নখের নিচ থেকেও বের হয়ে যাবে।

উৎস: সহিহ্ মুসলিম শরীফ, হাদিস: ২৪৫।

এতিম সন্তান ও বাবার আদর

বাবা হিসেবে নিজ সন্তানের প্রতি আপনার মোহাব্বত ও আদর আছে এটি সত্য। সন্তানও আপনার আদর ও উষ্ণতায় সিক্ত হতে চায়, এটিও সত্য। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ পাকের এটি একটি নেয়ামত; যা হৃদয়ে প্রশান্তি সৃষ্টি করে।

তবে, একজন এতিম সন্তানের সামনে আপনি আপনার নিজ সন্তানকে আদর করা, বারবার চুমু খাওয়ার দৃশ্য (যদিও তা সন্তানের হক্ক) যে ঐ এতিম বাচ্চার হৃদয়ে কষ্ট, দুঃখ ও ব্যাদনার সৃষ্টি করে; তা কি আপনি জানেন? আমি এমনও দেখেছি, বাবা ও সন্তানের আদরের দৃশ্য দেখে এতিম বাচ্চার চোখে নিরবে অশ্রুধার বইতে।

আল্লাহ পাক আমাদের, মানবিক বিষয় গুলো বুঝার তাওফিক দান করুক। এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তাদের জন্য ছায়া হিসেবে আমাদেরকে কবুল ও মঞ্জুর করুক। এতিমকে যে ভালোবাসে সে তো আল্লাহ ও তার প্রিয়ো রাসূল দঃ কে ভালোবাসে।

ইয়াজিদ সম্পর্কে দারুল উলুম দেওবন্দীদের ফাতাওয়া

চরমোনাই পীরের বক্তব্য

দারুল উলুম দেওবন্দের ইয়াজিদ সম্পর্কে ফতোয়াঃ

১। ইয়াজিদ তাবেয়ী ছিল। নাউযুবিল্লাহ!
যদি তাকে তাবেয়ী বলতে হয় তাহলে আব্দুর রাহমান মুলিজ, খারেজীদের ও হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে বলতে হবে।


২। তাকে রাহিমাহুল্লাহ বলা যাবে। কেননা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সাহাবীদের জন্য খাস। নাউযুবিল্লাহ। তাকে রাহিমাহুল্লাহ বলার ব্যপারে অধিকাংশ আলেমগণ নিষেধ করেছেন বরং তাকে লানত দেয়া হয়েছে।


৩। তার হাতে বাইয়াতে আম্মা নাকি হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট।
তার হাতে গুটিকয়েক সাহাবী ও তাবেয়ীরা বয়াত করেছিলেন। তাও আবার তার অত্যাচারের ভয়ে।


৪। তাকে আমীরুল মুমিনিন বলা যাবে। নাউযুবিল্লাহ! অথচ হযরত উমর বিন আব্দুল আজিজ রাঃ তিনি তার সামনে ব্যক্তিকে ইয়াজিদ আমিরুল মুমিনিন বলায় বিশটি বেত্রঘাত করেছেন।


৫। শিয়ারা নাকি তাকে ফাসেক, পাপীষ্ট বলে প্রচার করেছে। এ ব্যাপারে নাকি সঠিক কোন বর্ণনা নাই। নাউযুবিল্লাহ!
তাহলে ইমাম জাহাবী কি শিয়া, ইমাম ইবনে হাজার আসকালনী কি শিয়া ও উমর বিন আব্দুল আজিজ রাঃ কি শিয়াদের পক্ষে ছিলেন?


৬। বুখারীর বর্ণনায় যারা কুস্তুনতুনিয়ার যুদ্ধে প্রথম কাফেলায় শরীক হবেন তারা সবাই মাগফুর বা ক্ষমাপ্রাপ্ত। (এটাও মিথ্যা বানোয়াট) উক্ত যুদ্ধে প্রথম কাফেলায় ইয়াজিদ ছিল না বরং সে পঞ্চম কাফেলায় ছিল।

ফাতাওয়ার স্ক্রিনশট

দেওবন্দী আক্কীদার ব্যপারে ভাল জানতাম। এখন তা সম্পূর্ণ উল্টে।

আশুরা বা ১০ মহররম রোজা রাখা

মহররম মাস চলছে। এই মাস অনেক ফজিলতপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে চার মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে তাগিদ দিয়েছেন। আর মহররম সেই চার মাসের অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসেও অনেক আলোচনা এসেছে।

ফজিলত বিবেচনায় এই মাসের রোজা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসে রোজা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে মহররমের রোজার মধ্যে আশুরার রোজার ফজিলত আরও বেশি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি : ১/২১৮)

আশুরার রোজার ব্যাপারে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২/৩৬৮; জামে তিরমিজি, হাদিস : ১/১৫৭)

👉 আশুরার রোজায় তাওবা কবুল ও গুনাহ মাফ

আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোনো মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর নিকট জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১/১৫৭)

অন্য হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম : ১/৩৬৭; জামে তিরমিজি : ১/১৫৮)

👉 যে কারণে আশুরায় দুই রোজা

আশুরার রোজা সম্পর্কে এক হাদিসে আছে, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে— আশুরার আগে বা পরে আরও একদিন রোজা রাখ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১/২৪১)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি, তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোজা রাখব।’ (সহিহ মুসলিম : ১/৩৫৯)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: “আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদান প্রত্যাশা করছি আরাফার রোজা বিগত বছর ও আগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে। আরও প্রত্যাশা করছি আশুরার রোজা বিগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে।”[সহিহ মুসলিম (১১৬২)]

👉 রোজা যদি ২টি রাখা না যায়?

আশুরার রোজার বিধান প্রসঙ্গে ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, কেউ যদি শুধু মহরম মাসের ১০ তারিখ রোজা রাখেন এবং এর আগে বা পরে একটি রোজা যোগ না করেন, তবে তা মাকরুহ নয়; বরং এতে মুস্তাহাব বিঘ্নিত হবে। প্রকৃত সুন্নাত হলো, আগের ৯ মহরম বা পরের দিনের সঙ্গে ১১ মহরম মিলিয়ে মোট দুই দিন রোজা রাখা।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, তোমরা মহরমের নবম ও দশম দিবসে রোজা রাখ। (তিরমিজি ৭৫৫) অন্য হাদিসে নবি করিম (স) বলেছেন, আমি যদি আগামী বছর পর্যন্ত জীবিত থাকি তাহলে মহরম মাসের নয় তারিখের রোজাও পালন করব। (মুসলিম ১১৩৪)। তবে যে এ আশুরার দিন রোজা রাখতে পারল না, তার জন্য কোনো সমস্যা কিংবা আশাহত হওয়ার কিছু নেই। যদি কেউ ৯, ১০ এবং ১১ তারিখ মোট তিন দিন রোজা রাখেন তবে তা সর্বোত্তম হিসেবে গণ্য হবে।

👉 আশুরা তথা ১০ মহররম ঘিরে রয়েছে নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১০টি ঘটনা নিম্নরূপ—

১. এই দিনে আল্লাহ তা’আলা পৃথিবী সৃষ্টি করেন। আর এই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।

২. এ দিনে হজরত আদম (আ.) বেহেশত থেকে দুনিয়ায় নেমে আসেন। মহররমের ১০ তারিখে আল্লাহ পাক আদম (আ.)-এর দোয়া কবুল করেন এবং এ দিনে তিনি স্ত্রী হাওয়া (আ.)-এর সঙ্গে আরাফার ময়দানে সাক্ষাৎ করেন।

৩. হজরত নুহ (আ.)-এর জাতির লোকেরা আল্লাহর গজব মহাপ্লাবনে নিপতিত হওয়ার পর ১০ মহররম তিনি নৌকা থেকে ঈমানদারদের নিয়ে দুনিয়ায় অবতরণ করেন।

৪. হজরত ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ৪০ দিন পর ১০ মহররম সেখান থেকে মুক্তি লাভ করেন।

৫. হজরত আইয়ুব (আ.) ১৮ বছর কঠিন রোগ ভোগ করার পর মহররমের এই দিনে আল্লাহর রহমতে সুস্থতা লাভ করেন।

৬. হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.) তার ১১ ভাইয়ের ষড়যন্ত্রে কূপে পতিত হন এবং এক বণিক দলের সহায়তায় মিসরে গিয়ে হাজির হন। তারপর আল্লাহর বিশেষ কুদরতে তিনি মিসরের প্রধানমন্ত্রী হন। ৪০ বছর পর ১০ মহররম পিতার সঙ্গে মিলিত হন।

৭. হজরত ইউনুস (আ.) জাতির লোকদের প্রতি হতাশ হয়ে নদী অতিক্রম করে দেশান্তরিত হওয়ার সময় নদীর পানিতে পতিত হন এবং মাছ তাকে গিলে ফেলে। মাছের পেট থেকে তিনি আল্লাহর রহমতে ৪০ দিন পর মুক্তি পান ১০ মহররম তারিখে।

৮. হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের অত্যাচারের কারণে তার দলবলসহ অন্যত্র চলে যান। পথে নীল নদ পার হয়ে তিনি ফেরাউনের হাত থেকে আশুরার দিন মুক্তি পান। আর ফেরাউন তার দলবলসহ নীল নদের পানিতে ডুবে মারা যায়।

৯. হজরত ঈসা (আ.)-এর জাতির লোকেরা তাকে হত্যা করার চেষ্টা করলে মহররমের ১০ তারিখ আল্লাহ পাক তাকে আসমানে উঠিয়ে নিয়ে মুক্তি দান করেন।

১০. মহররম মাসের ১০ তারিখ কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনার অবতারণা হয়। এদিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালা প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেন।

শেষ ঘটনাটির জন্য বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বে আশুরা দিবসটি বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায় এই ঘটনাকে ঘিরেই শোক পালন করে থাকে। যদিও রাসূল দঃ এর আহলে বাইতের উপর করুণ ঘটনা প্রতিটি সুন্নি মুসলমানদের অন্তরে কষ্ট অনুভব করার এবং তারা এই মাসটিকে অত্যান্ত শ্রদ্ধা ও শোকের মাস হিসেবে বিবেচনা করে; যা একান্তই অন্তরের বিষয় ও অন্তরে কারবালার কষ্টের প্রতিচ্ছবি।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

১৪ ফেব্রুয়ারি “সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে” বর্তমানে যা “বিশ্ব ভালোবাসা দিবস” নামে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে।

মূলত এ দিবসটি প্রাচীন ইউরোপীয় গ্রীক-রোমান মুর্তি পুজারীদের একটি ধর্মীয় দিবস। যা ভারতীয় আর্যদের (হিন্দুদের) মতই। প্রাচীন রোমান মুর্তি-পুজারীদের মধ্যে নারীদের বিবাহ ও সন্তান কামনায় প্রাচীন দেব-দেবীদের আশীর্বাদ (বর) লাভের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বিভিন্ন নগ্ন ও অশ্লীল উৎসব পালন করত, যা “লুপারক্যালিয়া” নামে প্রচলিত ছিল।

ইউরোপে খৃষ্টান ধর্মের প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্র ধর্মের মর্যাদা লাভের পরেও এ সকল অশ্লীল উৎসব অব্যাহর থাকে। এ “লুপারকক্যালিয়া” উৎসবে মদপান, অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও ব্যভিচারকেই প্রাধান্য দেয়া হতো। অথচ ইসলামে কেবল এ সকল অশ্লীল ও ব্যাভিচারকেই নিষেধ করা হয়নি বরং ব্যভিচারের কাছে নিয়ে যায় এমন সকল কাজ করতেও কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মহান রাব্বুল আরামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

قُلْ تَعَالَوْاْ أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلاَّ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَلاَ تَقْتُلُواْ أَوْلاَدَكُم مِّنْ إمْلاَقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ وَلاَ تَقْرَبُواْ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَلاَ تَقْتُلُواْ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

‘আপনি বলুনঃ এস, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন। তা এই যে, আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে অংশীদার করো না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদয় ব্যবহার করো স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রের কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দেই, নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বুঝ।’ (সূরা: আন আম, আয়াত: ১৫১)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে তারা যখন প্রকাশ্যে অশ্লীলতায় লিপ্ত থাকে। তখন তাদের মধ্যে এমন সব রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে যা তাদের পূর্ব পুরুষদের মধ্যে প্রসারিত ছিল না। (সুনানে ইবনু মাজাহ- ২/১৩৩২, সহীহুল জা’মে- ২/১৩২১)

👉 সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে এর ঘটনাঃ-

মহান আল্লাহর গজব হতে বাঁচতে হলে গজবের কারণ তথা “লুপারকক্যালিয়া” ও সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে এবং তা পালনের প্রতি নিরুৎসাহিত করতে হবে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’র উৎপত্তি- ২৬৯ খৃষ্টাব্দে। ইতালির রোম শহরে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন, যার নাম সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস। ধর্ম প্রচারের অভিযোগ তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস এর নির্দেশে তাকে বন্দি করা হয়। কেননা তৎকালীন রোম সম্রাটের নির্দেশে তার সাম্রাজ্যে খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচার করা নিষিদ্ধ ছিল।

বন্দী অবস্থায় সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস জনৈক কারা রক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলেন। এতে তার চিকিৎসা বিদ্যার সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। রোম সম্রাট তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাম্বিত হয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেইদিন ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি।

অতঃপর সেন্ট জেলাসিও ১ম জুলিয়াস ২২৭ বছর পর ৪৯৬ খৃষ্টাব্দে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে “সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে” পালনের ঘোষণা করেন। কেননা প্রাচীন রোমানদের ধর্ম ছিল প্যাগান ধর্ম এবং তারা বিভিন্ন দেবতার পূজা করতো। তাদের বন্য পশুর দেবতার নাম ছিল লুপারকাস। এই দেবতার প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে “লুপারকক্যালিয়া” নামে উৎসব পালন করত। যা পূর্বে “ফেব্রুয়া” নামে পরিচিত ছিল।

আর এই “ফেব্রুয়া” থেকেই খৃষ্ট বষের্র দ্বিতীয় মাসের নামকরণ করা হয়েছে “ফেব্রুয়ারি”। এই পূজার প্রধান আকর্ষণ হলো লটারী। বিনোদন ও আনন্দের জন্য এই লটারীর মাধ্যমে সমাজের অবিবাহিত যুবতীদেরকে এক বছর ভোগ করার জন্যে যুবকদের মাঝে বন্টন করে দেয়া হতো এবং এ উৎসবে উৎসর্গকৃত কুকুর ও ছাগলের চামড়ার বানানো চাবুক দিয়ে সেই যুবতীদের বেত্রাঘাত করা হত। এক সময় রোমান শাসকেরা প্যাগান ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করলেও তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যে ও জনগণের আনন্দের জন্য প্যাগান সংস্কৃত “লুপারক্যালিয়া” বা “ফেব্রুয়া” উৎসব বহাল রাখেন।

আর এই “লুপারক্যালিয়া” উৎসব ১৩, ১৪, ১৫ ফেব্রুয়ারিতে পালন করা হতো। তাই সেই উৎসবের বিপরীতে পোপ ১ম জুলিয়াস ৬৯৪ খৃষ্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে “সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে” হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেন। এতে খৃষ্টজগত সেন্ট ভ্যালেন্টাইনসের অবদানকে স্বরণ করে বাৎসরিক মৃত্যু দিবস পালন করে। পরবর্তীতে খৃষ্টান পাদ্রীদের প্রচেষ্টায় খৃষ্টসমাজে ও রাষ্ট্রে “লুপারকক্যালিয়া উৎসবকে” ভ্যালেন্টাইনস দিবসে রুপান্তরিত করা হয়।

সে হিসেবে এ দিবসটি খৃষ্টান যুবক যুবতীদের আনন্দ উল্লাস করার দিন। এ ছাড়াও খৃষ্টজগতে আরো অন্যান্য পাদ্রীদের নামে দিবস রয়েছে। যেমন- ২৩ এপ্রিল “সেন্ট জজ ডে”। ১৭মার্চ প্যাট্রিক ডে । ২৪ আগষ্ট “সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে”। ১লা নভেম্বর আর্থো সেইন্টম ডে ইত্যাদি।

কিন্তু কিছু মারাত্মক অসুবিধার জন্য ফ্রান্স সরকার উল্লিখিত লটারি ১৭৭৬ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কাল পরিক্রমায় এটি ইতালি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানি থেকেও উঠে যায়। এর আগে সপ্তদশ শতাব্দীতে পিউরিটানরা যখন শক্তিশালী ছিল সে সময় ইংল্যান্ডে এটি নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু রাজা দ্বিতীয় চার্লস এটি ১৬৬০ সালে পুনরুজ্জীবিত করেন। ইংল্যান্ড থেকেই এটি নতুন বিশ্বে আগমন করে যেখানে এটিকেই টাকা বানানোর ভালো মাধ্যম হিসেবে নিতে ইয়াংকিরা (আমেরিকানরা) উদ্যোগী হয়। ১৮৪০ সালের দিকে ইস্টার এ হল্যান্ড ‘হোয়াট এলস ভ্যালেন্টাইন’ (What else Valentine) নামে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে আমেরিকান ভ্যালেন্টাইন ডে কার্ড বানায় এবং প্রথম বছরই ৫০০০ ডলারের কার্ড বিক্রি হয় (তখন ৫০০০ ডলার অনেক)। সে থেকে ভ্যালেন্টাইন ডে ফুলে ফেঁপে ওঠে।

এটি হ্যালোইনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সাধারণ মানুষ ভূত এবং অপদেবতার মতো পোশাকে সজ্জিত হয়ে পৌত্তলিকদের একটি প্রাচীন শয়তান পূজার পুনঃপ্রচলন করে। পৌত্তলিকেরা এর নাম দেয় সামহাইন (Samhain) যা সোয়েন (Sowen) হিসেবে উচ্চারিত হয়। যেমনটি ভ্যালেন্টাইন ডে’র ক্ষেত্রে ঘটেছিল। খ্রিষ্টানরা এর নাম পরিবর্তন করে ঠিকই, কিন্তু পৌত্তলিক শিকড় পরিবর্তন করতে পারেনি। দৃশ্যত নির্দোষ অনুষ্ঠানেরও পৌত্তলিক শিকড় থাকতে পারে। পূর্বকালে মানুষ ভূতপ্রেতকে ভয় পেত, বিশেষভাবে তাদের জন্মদিনে। একটি প্রচলিত বিশ্বাস ছিল, মন্দ প্রেরণা একজন ব্যক্তির জন্য অধিক বিপজ্জনক যখন কেউ প্রাত্যহিক জীবনে একটি পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। যেমন জন্মদিনে বা একটি বছরের শুরুতে। কাজেই সে ব্যক্তির পরিবার ও চার পাশের বন্ধুবান্ধব হাসি-আনন্দের মাধ্যমে জন্মদিনে তাকে মন্দ থেকে রক্ষা করত, যাতে তার কোনো ক্ষতি না হয়।

এটি একটি বিশাল ট্র্যাজেডি যে মিডিয়ার মাধ্যমে নিত্য বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক অপপ্রচারে মুসলমানেরা ভালোবাসা দিবস (Valentine day) হেলোইন (Halloween) এবং এমনকি সান্তাক্লজকেও (Sant claus) আলিঙ্গন করে নেয়।’’ (সুত্রঃ ইম্প্যাক্ট ইন্টারন্যাশনাল, লন্ডন, মার্চ ২০০১)

বর্তমানে গ্রেট ব্রিটেন ও আমেরিকা ছাড়া আর কোথাও এ দিবসটি তেমন ভাবে পালিত হয় না। কিন্তু কেমন করে যেন আমাদের উপর এ মুসীবতটি চেপে বসেছে। আমাদের দেশে এ দিবসটির সূচনা করেন সাংবাদিক শফিক রেহমান। ১৯৯৩ সালের দিকে আমাদের দেশে তার মাধ্যমে ভালোবাসা দিবসের আবির্ভাব ঘটে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার অফিসের সামনে একটি সড়কের নামকরণও করেন ‘লাভ লেন’। বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণায় একমাত্র তিনিই সরব ছিলেন। পরে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে জনপ্রিয় হতে শুরু করে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’। এখন বাংলাদেশে এ দিবস পালিত হয় ব্যাপক পরিসরে, নানা আয়োজনে। জানা যায়, শফিক রেহমানকে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত লন্ডনে নির্বাসিত থাকতে হয়েছিল। সে সময় তিনি সেখানে ‘ভালোবাসা দিবস’ উৎযাপন হতে দেখেছেন। লন্ডনে নব্বইয়ের দশকে খুব বেশি উদ্যাপিত হওয়া শুরু হয় ভ্যালেন্টাইন ডে। বাণিজ্যিক কারণে হলেও সেখানকার স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকারা দিবসটিকে সাদরে গ্রহণ করেন। ওই সময়ই শফিক রেহমান সিদ্ধান্ত নেন, বাংলাদেশে ফিরে আসার পর দিনটিকে বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেবেন। তবে বাংলাদেশে শুরু করার আগে লন্ডনে প্রচলিত ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’ থেকে শুরুর ‘সেন্ট’ শব্দটি ধর্মীয় কারণে বাদ দেওয়া হয়। এটি ‘ভালোবাসার দিন’ হিসেবে প্রচার শুরু হয় তৎকালীন যায়যায়দিন পত্রিকায়। সে থেকে এই আমাদের দেশে দিনটির শুরু।(সুত্রঃ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং)

👉 ইসলাম “সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে” সম্পর্কে কি বলে?

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

خالفوا اليهود والنصارى

অর্থঃ তোমরা ইয়াহুদী ও নাসারাদের বিরোধিতা কর।–সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ২১৮৬


خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ

অর্থঃ তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর।–সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৮৯২

قَالَ لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ مَنْ قَبْلَكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ سَلَكُوا جُحْرَ ضَبٍّ لَسَلَكْتُمُوهُ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى قَالَ فَمَنْ

অর্থঃ তোমরা অবর্শ্যই পূর্ববতীদের রীতিনীতি অনুসরণ করবে প্রতিটি বিঘতে বিঘতে, প্রতিটি হাতের দৈর্ঘ্যে। এমনকি তারা কোন গুইসাপের গর্তে প্রবেশ করলে (তাদের অনুসরণে) তোমরাও প্রবেশ করবে। তখন সাহাবায়ে কেরাম বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইয়াহুদী নাসারা (দের কথা বলছেন)? তিনি বললেন, তারা ছাড়া আর কে?-সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৩৪৫৬

অন্য হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন –
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

অর্থঃ যে ব্যক্তি যে জাতির অনুসরণ করে সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে।–সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪০৩৩

এই দিনে তরুন তরুণী ভালোবাসা আদান প্রদানের নামে সাক্ষাত, কথোপকথন, মদ্যপান, কনসার্ট, অবৈধ সংস্পর্শ কত কি-ই না করে থাকে? অনেকে তো নিজের সতীত্ব নষ্ট করার জন্য এ দিনটি ধার্য্য করে থাকে। এছাড়া গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, টি এস সি প্রাঙ্গন সহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় কত কি যে ঘটে থাকে তা সবারই জানা।

অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন –

وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا

অর্থঃ আর যিনার কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীলতা এবং কতই না নিকৃষ্ট কাজ।– সূরা ইসরা, আয়াত ৩২

❤️ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

১। ব্যভিচারী পুরুষ ও ব্যভিচারিণী নারীদেরকে মৃত্যুর পর তন্দুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে আযাব দেওয়া হবে। যার মুখ সরু কিন্তু অভ্যন্তরভাগ অত্যন্ত গভীর ও প্রশস্ত। তার মধ্যে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকবে। আর তারা সেই আগুনে দগ্ধীভূত হতে থাকবে। আগুনের তেজ এত বেশী হবে যে, কেমন যেন আগুনের ঢেউ খেলতে থাকবে। ঢেউয়ের সাথে যখন আগুন উপরের দিকে উঠতে থাকে তখন তার মধ্যে অবস্থিত লোকগুলো উথলে এসে গর্তের মুখের দিকে পৌঁছে গর্ত থেকে বের হয়ে যাবার উপক্রম হয়ে যায়। আবার আগুন নীচের দিকে নেমে গেলে তারাও আগুনের সাথে নীচের দিকে নেমে যায়। আর এই আযাব কিয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে দেওয়া হবে।–সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১৩৮৬

২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন আল্লাহ তাআলা তার সকল সৃষ্টির প্রতি নজর দেন। অতঃপর যারা আল্লাহ তাআলার কাছে মাফ চান তাদের সকলকে মাফ করে দেন, তবে ব্যভিচারীদের আল্লাহ তাআলা মাফ করেন না।–আলকামেল লিইবনি আদী ৪/৩৫৬ (শামেলা)

৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন আমার উম্মতের আমলসমূহ আমার নিকট প্রতি সপ্তাহে উপস্থাপন করা হয়। আল্লাহ তাআলার ক্রোধ ব্যভিচারীদের উপর কঠিনতর হয়।–হিলয়াতুল আউলিয়া ৪/২৯৩

এছাড়াও হাদীস শরীফে কোন গাইরে মাহরাম মহিলার দিকে তাকানোকে চোখের যিনা, তাকে স্পর্শ করাকে হাতের যিনা, তার প্রতি অগ্রসর হওয়াকে পায়ের যিনা, চুম্বন করাকে ঠোঁটের যিনা এবং কথা বলাকে জিহ্বার যিনা বলে অভিহিত করা হয়েছে।– সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৬২৪৩; শুআবুল ঈমান, হাদীস নং ৭০৬০।

فَزِنَا الْعَيْنَيْنِ النَّظَرُ وَزِنَا الْيَدَيْنِ الْبَطْشُ وَزِنَا الرِّجْلَيْنِ الْمَشْيُ وَزِنَا الْفَمِ الْقُبَلُ

অর্থঃ দুই চোখের যিনা হল (কোন গাইরে মাহরাম মহিলার দিকে) তাকানো, দুই হাতের যিনা হল স্পর্শ করা, দুই পায়ের যিনা হল (তাকে উদ্দেশ্য করে) হাঁটা এবং ঠোঁটের যিনা হল চুম্বন করা। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১০৯২০।

👉🏻 তাই প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য এ দিবস পালন করা থেকে বিরত থাকা এবং এর অশ্লীলতা থেকে নিজেকে হেফাজত করা ঈমানী দ্বায়িত্ব। এ দিনকে কেন্দ্র করে যা কিছু ঘটে থাকে তাতে নিজেকে সম্পৃক্ত করা ঈমান হরণের কারণ হতে পারে।

হাদীস শরীফে এসেছে-
কেউ যদি কাউকে আল্লাহ তাআলার জন্যই ভালবাসে তবে সে তার ঈমানকে পরিপূর্ণ করল।–সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬৮৩

অন্য হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তাআলার জন্য একে অপরকে যারা ভালোবাসে তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার আরশের ছায়াতলে থাকবে। যেদিন আল্লাহ তাআলার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না।–সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৬৬০

তাই আসুন আমরা আল্লাহ তাআলার দুশমন ইয়াহুদী, নাসারা, মুশরিক সর্বোপরি অমুসলিমদের উদ্ভাবিত সকল অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে পূর্ণাঙ্গরূপে শান্তি ও ভালোবাসার ধর্ম ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে প্রবেশ করি।

আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

অর্থঃ আর যে কেউই ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবন-ব্যবস্থা আকাঙ্খা করবে, তা কখনোই তার নিকট হতে গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন৷” (সূরা আল ইমরান, আয়াত ৮৫)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ ধরণের গোমরাহী থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।

হারিয়ে যাওয়া জিনিস ফিরে পেতে কুরআনিক আমল ও আল্লাহ পাকের গুনবাচক নামের ফজিলত

হারানো জিনিস ফিরে পেতে রয়েছে কুরআনি আমল। মানুষ যখন তাঁর কোনো জিনিস হারিয়ে ফেলে তখন কুরআনি আমল করলে – আল্লাহ পাকের ইচ্ছায়, হারিয়ে যাওয়া সম্পদ ফিরে পাওয়া যায়। হারানো সম্পদ ফিরে পাওয়ার কুরআনি আমল তুলে ধরা হলো।

✅ ১। কোনো জিনিস হারিয়ে গেলে আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক নাম (اَلْحَيُّ) ‘আল-হাইয়্যু’-এর আমল করলে তা পাওয়া যায়।

আল-হাইয়্যু নামটি (اَلْحَيُّ) ১০৮ বার পাঠ করে; তবে আল্লাহ তাআলা তাকে যাবতীয় অকল্যাণ থেকে মুক্তি দান করবেন।

✅ ২।  কোনো ব্যক্তির নিকটাত্মীয়-স্বজন বা পরিবার পরিজনের কেউ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বা হারিয়ে যায় তবে সে যেন আল্লাহ তাআলার এ গুণবাচক নাম (اَلْجَامِعُ) ‘আল-জামেয়ু’-এর আমল করে। এ নামের আমলের ফলে অতি দ্রুত পরিজনের সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তির সাক্ষাত ঘটবে।

যেভাবে আমল করবেন

চাশতের নামাজের সময় (ইশরাকের নামাজের সময়ের পর থেকে জোহরের নামাজের সময় হওয়ার আগে) শুরু হওয়ার পর সে গোসল করে নেবে। অতঃপর আসমানের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ তাআলার এ পবিত্র গুণবাচক নাম (اَلْجَامِعُ) ‘আল-জামেয়ু’ ১০ বার পড়বে।

প্রত্যেক বার পড়ার সময় হাতের একটি আঙ্গুল বন্ধ (মুষ্ঠিবদ্ধ) করবে। ১০ বার পড়ার সঙ্গে উভয় হাতের ১০ আঙ্গুল বন্ধ (মুষ্ঠিবদ্ধ) হবে। অতঃপর উভয় হাত মুখ-মণ্ডলে মাসেহ করবে।
মহান আল্লাহর ইচ্ছায় অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি তার পরিবার পরিজনের সঙ্গে একত্রিত হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর এ সুন্দর ও ছোট্ট গুণবাচক নাম (اَلْجَامِعُ) ‘আল-জামেয়ু’-এর আমল নির্ধারিত নিয়মে হারিয়ে যাওয়া আপনজনকে কাছে পেতে যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন, আমিন।

✅ ৩। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউ’ন। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৫৬) #আমলটির ফজিলত-> কোনো জিনিস হারিয়ে গেলে যে ব্যক্তি সহিহ নিয়তে কুরআন কারিমের এ আয়াতখানি তিলাওয়াত করতে করতে হারানো জিনিস অনুসন্ধান করে, নিশ্চয় সে হারানো জিনিস পেয়ে যায়। অথবা এ আমলের ফলে আল্লাহ তাআলা হারানো জিনিসের চেয়েও উত্তম বস্তু দান করেন।

✅ ৪। কোনো জিনিস হারিয়ে গেলে অথবা অপহরণ করা হলে এ আয়াতখানি (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৫৬) ২৯ বার এবং সুরা দোহা ৭ বার পাঠ করতে হয়। তবে এ আমলদ্বয়ের প্রথমে এবং শেষে অবশ্যই ১১ বার দরূদ পাঠ করতে হবে। এ আমল করলেও হারানো বস্তু ফিরে পাওয়া যায়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হারানো জিনিস ফিরে পেতে কুরআনের ফজিলতপূর্ণ আমল গুলো যথাযথ নিয়মে আদায় করার তাওফিক দান করুন, আমিন।

প্রাকৃতিক দৃশ্যের স্বর্গরাজ্য প্রিয় মাইনীমুখ ইউনিয়ন এবং লংগদু উপজেলা

রাঙ্গামাটি জেলার প্রত্যন্ত জনপদ লংগদু উপজেলা। তারই প্রাণভোমরা হলো জনবহুল এবং দূরদূরান্তের মানুষ গুলোর একমাত্র বাজার “মাইনী মুখ বাজার”। যদিও এই ইউনিয়নের নামও মাইনী মুখ নামে। এশিয়ার বৃহত্তম কাপ্তাই হ্রদ ও নানান নদীর মিলন আর পাহাড়ের দৃশ্য যে কারো মন নিমিষেই ভালো করে দিতে পারে। প্রকৃতি প্রেমিকরা জানে এই সৌন্দর্যের মূল্য কতোটুকু।

রাঙ্গামাটি থেকে লঞ্চে করে এই এলাকায় যাতায়াত করা যায়; যা খুবই পুরাতন ও জনপ্রিয় একটি মাধ্যম, যার ভাড়া সুবিধা অনুসারে ১২০-১৭০ হয়ে থাকে। তবে এখন সড়ক পথেও যাত্রা করা যায় খাগড়াছড়ি হয়ে মেরুং বাজার পাড়ি দিয়ে; আসার পথে চোখে পড়বে নানানা আঁকাবাকা উঁচু নিচু রাস্তা, পাহাড়ী গাছ, পিচ ঢালা পথের নৃত্য এবং নানান রঙের মানুষ ও ভিন্ন কালচার। এছাড়াও আপনি চাইলেই রাঙ্গামাটি থেকে নদী পথে কাপ্তাই লেক উপভোগ করতে করতে চলে আসতে পারেন স্পিড বোট এ করে। স্পিড বোট আপনাকে ১ ঘন্টার মধ্যেই মাইনী মুখ বাজার নামিয়ে দিবে; বিনিময়ে জনপ্রতি ৫০০ টাকা নিবে। মাইনী মুখ বাজার এ রয়েছে কিছু আবাসিক হোটেল। চাইলে আপনি রাত্রি যাপন করতে পারেন।

কিছু দৃশ্য দেখাতে চাই আপনাদের

তোমরা যার ইবাদাত/পূজা কর তা আমার পায়ের তলায়! – ইবনে আরাবী রহঃ এর উক্তির বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা

ইবনে আরাবী রহঃ এর মাজার শরীফ

‘What you worship is under my feet. Your god is under my feet!’ (তোমরা যার ইবাদাত/পূজা কর, তা আমার পায়ের নিচে। তোমাদের ‘গড’ আমার পায়ের তলায়!)

উপরের এই ‘বিস্ময়কর, জটিল ও রহস্যপূর্ণ’ উক্তিটি যিনি করেছেন, তিনি ইসলামি ইতিহাসের একজন কিংবদন্তি মহাপুরুষ। ইসলামের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। শায়খুল আকবর। মহিঊদ্দীন ইবনে আরাবী রহঃ।

উসমানী সাম্রাজ্যের উত্থান ও ৭০০ বছর স্থায়ীত্বের পিছনে যার অবদান ও দোয়া অনস্বীকার্য।

উপরের মারাত্মক কথাটির জন্য তৎকালীন সময়ে তিনি যাদেরকে ‘তোমরা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন ও কথাটির ‘উদ্দেশ্য’ করেছিলেন, তারা ইবনে আরাবীকে রহঃ কাফের ও মুরতাদ ঘোষণা করেছিল। বেদড়ক প্রহার ও নির্যাতন করেছিল। শেষে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিল। তারা তাঁকে কবরও দেয়নি। তাকে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করা হল। সেখানে ময়লা ও আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিন বানানো হল।

তারা তাঁর কথার রহস্য ও উদ্দেশ্য ধরতে অক্ষম ছিল। সম্পূর্ণ ব্যর্থ ছিল। তারা জলের উপরে ছিল, গভীরে গিয়ে তলিয়ে দেখতে পারেনি।

তাঁর দেহ মুবারক যেখানে ফেলা হয়েছিল, সেই স্থানটি কালের বিবর্তনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। আবর্জনা ও মাটির নিচে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।
লোকেরা জানতো না ইবনে আরাবী’র সমাধি কোথায়!

৩০০ বছর পর, উসমানী সুলতান প্রথম সেলিম, তাঁর সমাধি স্থানটি অনুসন্ধান ও গবেষণা করে চিহ্নিত করেন। তাঁর দেহ মুবারক উদ্ধার করেন। সসম্মানে দাফন করেন। ওটা ছিল সিরিয়ায়, মানে ‘শাম/দামেস্ক!’

যাইহোক, ইবনে আরাবী রহঃ তাঁর বিখ্যাত কিতাব, ‘আল ফুতুহাতুল মক্কীয়্যা’ তে এ ব্যাপারে, মানে তাঁর দেহ মুবারক উদ্ধারের ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী করে গিয়েছিলেন,

‘যখন সীন শীনের ভিতর প্রবেশ করবে, তখন মহিঊদ্দীনের সমাধি উদ্ধার হবে। মহিঊদ্দীনের গুপ্ত রহস্য উন্মোচিত হবে!’

এটাও তো সেই প্রথম কথাটির মতোই জটিল ও রহস্যময়। উদ্ধার হবার তিনশ বছর আগে কে বুঝতে পেরেছিল ‘সীন শীনের ভিতর প্রবেশ’ করার মানে!

৩০০ বছর পর, ইসলামি জ্ঞান বিশেষজ্ঞরা, এই কথাটির রহস্য বুঝতে সক্ষম হন।

সীন, একটি আরবি অক্ষর, যা দিয়ে ইবনে আরাবী রহঃ ‘সুলতান সেলিম’ কে বুঝিয়েছিলেন!

শীন, আরও একটি আরবি অক্ষর, যা দিয়ে তিনি ‘শাম’ কে বুঝিয়েছিলেন!

তাহলে কথাটির মানে দাঁড়াল, ‘যখন সেলিম শামে প্রবেশ করবে, মানে শামকে জয় করবে, তখন মহিঊদ্দীনের সমাধি ও রহস্য উন্মোচিত হবে!’

ইতিহাস সাক্ষী, ভবিষ্যৎ বাণীর ঠিক তিনশ বছর পর, তা সম্পূর্ণ বাস্তবে পরিণত হয়েছিল!

আর, ‘তোমরা যার ইবাদাত/পূজা কর তা আমার পায়ের তলায়!’ কথাটির রহস্য কী ছিল!
যে কথাটির জন্য তাঁকে কাফের ও মুরতাদ বলা হলো! নির্যাতন করা হলো! ফাঁসিতে ঝুলানো হল। কবর দেয়া হলো না!

তাঁর সমাধি উদ্ধারের সাথে সাথে, সুলতান সেলিমের নির্দেশে, তৎকালীন জ্ঞানী সমাজ এ কথাটির রহস্যও উদ্ধার করেছিলেন!

✅ ‘তোমরা যার ইবাদাত/পূজা কর, তা আমার পায়ের নিচে। তোমাদের ‘গড’ আমার পায়ের তলায়!’

কথাটি তিনি কখন, কাদের বলেছিলেন:
—–
একদিন ইবনে আরাবী রহঃ দামেস্কের, মানে শামের, রাস্তায় হাঁটছিলেন।

পথিমধ্যে তিনি দেখলেন, একজন ইমাম, যে ছিল অর্থ ও সম্পদ লোভী, বেশকিছু লোকজন নিয়ে একটি ধর্মীয় সভা বা মাহফিল করছিল। সভায় যারা উপস্থিত ছিল, তারাও ছিল ঐ ইমামের মতোই অর্থ ও দুনিয়ালোভী। তাদের অন্তর ছিল এসবের লোভে ভরপুর। তারা রাজকীয় অর্থ ও সম্পদের লোভেই ঐ সভা করছিল। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য নয়।

ইবনে আরাবী, তাঁর বাহ্যিক ও অন্তর্দৃষ্টি (তাওয়াজ্জুহ) দ্বারা তাদের হাকিকত অবলোকন করলেন। তখন তিনি ঐ সভাস্থানের দরজায় দাঁড়িয়ে তাদের ডাকলেন এবং বললেন,

‘I am treading upon the god you worship; he is under my feet!’

মানে, ‘যে  প্রভুর ইবাদাত তোমরা করতেছো, আমি তার উপর দিয়ে হাঁটতেছি; সে আমার পায়ের তলায়!’

সাথে সাথেই লোকেরা তাদের সভা ভেঙ্গে দিল। লোকজন উত্তেজিত হয়ে গেল। লোকেরা স্বাভাবিকভাবেই এই মারাত্মক, জটিল ও রহস্যময় কথাটির নিসবত করেছে মহান আল্লাহ পাকের দিকে। নাউজুবিল্লাহ।

অনেকটা হযরত মনছুর হাল্লাজ রহঃ এর মতো।

ইবনে আরাবীকে মারধর করলো। কাফের ও মুরতাদ ঘোষণা দিল। আগের পর্বে এসব বলেছি।

✅ সুলতান প্রথম সেলিম কর্তৃক কথাটির রহস্য উন্মোচন

সুলতান সেলিম যখন শামে প্রবেশ করলেন, মানে, শাম বিজয় করলেন, তখন তিনি ইবনে আরাবী রহঃ এর পরিত্যক্ত ও হারিয়ে যাওয়া সমাধি স্থানটি ময়লা ও আবর্জনার ভাগাড় হতে উদ্ধার করলেন। বছরের পর বছর, তিনশ বছর, মানুষ ইবনে আরাবীর সমাধির উপর ময়লা ও আবর্জনা ফেলেছিল।

তিনশ বছর পরেও ইবনে আরাবীর দেহ মুবারক সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল। সতেজ ও নুরানী ছিল। যেন গতকাল ইন্তেকাল করেছেন! মাটির সমতল হতে ৭০-৮০ মিটার গভীর হতে ইবনে আরাবী রহঃ এর দেহ মুবারক উদ্ধার করা হয়! সেখানে স্বর্গীয় নুর ও খুশবুতে ভরপুর ছিল।

উদ্ধারের পর সুলতান অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করলেন। তারপর, নতুন সমাধি তৈরি করে তাতে নতুনভাবে ইবনে আরাবীকে দাফন করলেন। এবং নির্দেশ দিলেন সেখানে মসজিদ ও মাজার শরীফ নির্মাণের। যা এখনো ‘মহিঊদ্দীন ইবনে আরাবী মসজিদ’ নামে সসম্মানে দাঁড়িয়ে আছে।

 এই উদ্ধারের ঘটনাটিও খুবই চমৎকার। তাও ইবনে আরাবীর নিজেরই নির্দেশে। সেটা আরেক পর্বে, ইনশাআল্লাহ।

তো যাইহোক, ইবনে আরাবীর দেহ মুবারক উদ্ধারের পর সুলতান সেলিম চিন্তা করলেন,

‘যে কথাটির জন্য ইবনে আরাবীকে এই অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় পড়তে হলো, তিনশ বছর যাবৎ মানুষের নিকট ঘৃণিত হতে হলো, কাফের ও মুরতাদ হিসেবে স্বীকৃত ছিলো, সেই কথাটির মর্ম ও ভেদ উদ্ধার করতে হবে। ইবনে আরাবীকে এমন জঘন্য অপবাদ হতে মুক্ত করতে হবে।’

তাই তিনি খুঁজতে লাগলেন তিনশ বছর আগের ঐ সকল আলেম ও লোকদের বংশধর, যারা ইবনে আরাবীকে কাফের ও মুরতাদ ঘোষণা দিয়েছিল ও হত্যা করেছিল। বহু খোঁজাখুঁজির পর তিনি পেয়ে গেলেন ১৩৭ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে। সুলতান বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। বৃদ্ধ জানালেন, ইবনে আরাবীর সেই ঘটনাটি তিনি তার পিতা হতে শুনেছেন, যে ১০০ বছর বেঁচে ছিল। উনি উনার পিতা হতে শুনেছেন। উনি, মানে বৃদ্ধের দাদা, সেই ঘটনাস্থলে ছিল, যখন ইবনে আরাবীকে হত্যা করা হচ্ছিল!

সুলতান, বৃদ্ধকে নিয়ে সে-ই স্থানে গেলেন, যে-ই স্থানে দাঁড়িয়ে ইবনে আরাবী বলেছিলেন, ‘তোমাদের প্রভু আমার পায়ের নীচে!’

বৃদ্ধ তার পিতার কাছ হতে ঐ জায়গাটি চিনে রেখেছিলেন। ঐ দরজাটি, যেখানে দাঁড়িয়ে ইবনে আরাবী অদ্ভুত কথাটি বলেছিলেন।

বৃদ্ধের কাছ হতে সুলতান জায়গাটি চিহ্নিত করলেন। তারপর তার লোকদের নির্দেশ দিলেন জায়গাটি খনন করতে। কূপের মতো জায়গাটি খনন করা হলো।

তিন -চার মিটার খনন করার পর সেখানে পাওয়া গেলো সাত ব্যারেল স্বর্ণ! প্রাচীন কাল হতে সেগুলো সেখানে মাটির নিচে লুকায়িত ছিল! এক ব্যারেল সমান ১৫৯ লিটার। সাত ব্যারেল সমান ১১১৩ লিটার স্বর্ণ!

তখন সবাই বুঝলেন, ইবনে আরাবীর সে-ই অদ্ভুত কথাটির মানে কী!

ইবনে আরাবীর কথাটির মানে ছিল, তিনি কথাটি দ্বারা বলতে চেয়েছিলেন,

‘দেখো, তোমরা যে দুনিয়া ও দুনিয়ার সম্পদের লোভে ইবাদাত করো, সেই দুনিয়া ও দুনিয়ার সম্পদ আমার পায়ের নিচে! তোমরা যা পেতে ইবাদত করো, আমি তার জন্য ইবাদত করি না। আমি ইবাদাত করি আল্লাহ পাকের। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য!’

তিনি দুনিয়া ও দুনিয়ার সম্পদকে রূপকার্থে তাদের প্রভু বলেছিলেন, যেহেতু আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি বাদ দিয়ে ওরা ঐগুলোর মোহে পাগল ছিল!

তিনশ বছর যাবৎ মানুষের নিকট ঘৃণিত ও অবহেলিত থাকার পর, অবশেষে এভাবেই সুলতান প্রথম সেলিম এর মাধ্যমে ইবনে আরাবী রহঃ কলঙ্ক মুক্ত হলেন।

তারপর হতেই তিনি বিশ্বব্যাপী তাসাউফের প্রবাদপুরুষ। শায়খুল আকবর নামে সকল সত্যপন্থীদের নিকট সমাদৃত। উনার কিতাব সমূহের উদ্ধার, প্রচার ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণেও সুলতান প্রথম সেলিমের অবদান অনস্বীকার্য।

আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত, সুফিজম, মুসলমানদের ভবিষ্যৎ এবং তুর্কি উত্থান কোন পথে আগাচ্ছি আমরা!

আরেকটা সোনালী যুগের অপেক্ষা মুসলিম বিশ্ব। সৌদির মতো দালাল মুসলিম দেশ গুলোর পীড়াদায়ক হলেও; মুসলিম সাম্রাজ্যের বিপ্লবের নিশ্চিত সুপ্রসন্ন ভবিষ্যৎ।

তুর্কিবংশীয় ইসলামের শেষ খিলাফত এর পতনের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন – সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের যেমন শিকার হয়েছি ঠিক তেমনিভাবেই ইসলাম ধর্মের উপর আঘাত দিতেই নিজ ঘরে সেই সব সাম্রাজ্যবাদীরা তৈরি করেছে কিছু দালাল। আর সেই দালাল সৌদি আরব শাষক গুলো আমাদের কলিজ্বায় আঘাত করেছে বারংবার “ওহাবীবাদ প্রতিষ্ঠা বা আরব বসন্তের উষ্কানিতে”। যারা আমার রাসূলের দুষ্মণ, মুসলিম মিল্লাতের দুষ্মণ, আহলে বায়েত সহ সাহাবাদের বিরুদ্ধাচারণ এর অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী।

ধিক্কার, সেই বাস্টার্ড শাষক গুলোর যারা পদলেহন এ ব্যস্থ সেই সাম্রাজ্যবাদীদের।

তবে, বড় কষ্ট হয় আরেকটি জায়গায় – আমাদের বাংলাদেশের উচিৎ, বিশেষ করে যারা সূফিবাদ ও আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত এর প্রতিনিধিত্বকারী; তুর্কিদের সাথে সব ধরনের সখ্যতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় সহ ধর্মীয় দিক থেকে তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা। যদি আমরা খানকাহ, পীর, দরবার নিয়েই শুধু পড়ে থাকি তাহলে বাতিল আক্বীদার রাজনৈতিক অনুশারীরা সেই সুযোগ নিয়ে; ফায়দা লুটার অপচেষ্টায় লিপ্ত হবে।

আমি যদি নাম ধরেই তাদের পরিচিত করিয়ে দিতে চাই তাহলে বলবো – বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল তুর্কিদের সাথে কিছু বিষয়কে সামনে রেখে আরো ক্ষমতাসীল হতে চাচ্ছে। আর সেই দৌড়ে আছে “বাংলাদেশ জামায়াত ইসলাম” সহ কিছু বাতিল আক্বীদার রাজনৈতিক সংগঠন। মিলের বিষয় গুলো হলোঃ-

১। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা ও আদর্শ।
২। কূটনৈতিক দক্ষতা প্রমাণ করার চেষ্টা।
৩। সুফিবাদের সাথে লোকদেখানো সখ্যতা।
৪। মাজলুম হিসেবে নিজেদের (মিথ্যে) পরিচয় করানো।

আমরা সকলেই জানি – এই দলটির সাথে উপরিউক্ত বিষয় গুলোর কোন সম্পর্কই নেই। বরং তারা অন্য শ্রেণীর আরেক আহলে হাদিস তথা ওহাবীবাদের এজেন্ট। তাই আমাদেরও (আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত ও সুফিবাদ) এই বিষয় গুলো নিয়ে চিন্তা করার এবং সুকৌশলে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সত্যিকারের যারা দ্বীন কে ভালোবাসে ও সুফিজমের আদর্শে বলিয়ান তাদের সকলের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে একটি অবস্থান তৈরি করা। পীর/দরবার একেক জনের একেকটি হবে কিন্তু আমরা যারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত এর অনুসারী এবং সূফিজমকে ভালোবাসি আল্লাহ, তার রাসূল, সাহাবা ও আহলে বায়েতের মোহাব্বতে; তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া বর্তমান সমাজ ও যুগের অন্যতম চাহিদা এবং আগামীদিনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

বাংলাদেশ জামায়াত ইসলাম – কখনোই মুসলমানের কল্যাণের কথা ভাবেনি; ইসলামের মূল আদর্শের সাথে তাদের রয়েছে বহু সাংঘর্ষিক মতবাদ। এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মৌদুদির আক্বীদা ছিলো জঘন্য এবং তাকে ভারতীয় উপমহাদেশের সকলের বিভ্রান্ত ও বাতিল বলেই স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা চায় ইসলামের ব্যানারে সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মুসলমানদের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে সেই মৌদুদির “জঘন্য মতাদর্শ” প্রতিষ্ঠা করতে। তাই তারা ক্ষমতা লিপ্সায় আজ আওয়ামিলীগ তো কাল বিএনপি পরশু অন্য আরেকটি দলের সাথে সখ্যতা ও জোট করতেও পিছপা হবেনা এবং অতীত ইতিহাস সে কথাই বলে।

আমাদের যারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত, সুফিজম এবং আহলে বায়েত সহ সাহাবায়ে কেরাম ও রাসূল দঃ এর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও মোহাব্বত রাখেন; আল্লাহ ও তার রাসূলের দঃ ইসলাম আরো বহুকাল প্রতিষ্ঠিত করতে চায়; তাদের উচিৎ আজই ঐক্য গড়ে তোলা সেই শহীদ নুরুল ইসলাম ফারুকী রহঃ এর স্লোগানে “পীর/দরবার যার যার, সুন্নিয়র সবার”

নিকটতম মানুষ গুলোর সাথে আমাদের কেমন আচরণ হওয়া উচিৎ এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম – যেমন ফেজবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার (ইত্যাদি) আবিষ্কারের অন্যতম কারণ ছিলো; ব্যস্ততার এই যান্ত্রিক সময়ে নিজের অবস্থান, পরিস্থিতি এবং অনুভূতি গুলো সবার সাথে (বিশেষ করে পরিবার, পরিচিত ও নিকটতম মানুষ গুলো) শেয়ার করার জন্য। সুখ, দুঃখ সবকিছুই ভাগাভাগি করে নিতেই। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই যোগাযোগ মাধ্যম গুলো কল্যাণ যতোটা করেছে ঠিক তেমনিভাবে অকল্যাণও সৃষ্টি করেছে নানান ভাবে।

📝 তবে আজ আমি কথা বলবো – নিকটতম মানুষ গুলোর সাথে আমাদের কেমন আচরণ হওয়া উচিৎ এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে; বিশেষ করে ফেজবুক ও ইন্সটাগ্রামে।

দেখেন, আমাদের অনেক করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় রয়েছে। সেগুলো যদি আমরা অনুসরণ করতে পারি তাহলে এই যোগাযোগ মাধ্যম গুলো আমাদের মধ্যে ভারসাম্য অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে।

✅ করণীয়ঃ-

১। পরিচিতদের সাথে সবসময় যোগাযোগ বজায় রাখা।

২। তাদের ভালো কিছুকে বাহবা দেওয়া এবং মন্দ গুলোকে সম্পর্কের গভীরতার বিচারে আঘাত ছাড়াই শুধরিয়ে দেওয়া।

৩। অনেক কিছুই দেখার সাথে সাথে অহেতুক কথা না বলে, না দেখার মতোই ভান করে এডিয়ে (Skip) যাওয়া।

৪। ভালো কথা গুলো প্রচার করা; আপনার জন্য যা ভালো তা অন্যের জন্য বিষও হতে পারে। তাই, ভালো হলেই তাকে গিলানোর চেষ্টা না করা। অহেতুক, ট্যাগ/ম্যানসন এ না জড়ানো।

৫। যদি মাঝেমধ্যে হুশ হারিয়ে ফেলা অবুজ কাউকে মনে হয় তাকে চিরকাল এর জন্য ব্লগ করে দেওয়া।

৬। আদর্শ, মতামত, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক বিষয় গুলো যতোটা সম্ভব ব্লগিং, পেইজ এর মাধ্যমে প্রচার করার চেষ্টা করা।

❎ বর্জনীয়ঃ-

১। কারো কোন স্ট্যাটাস নিয়ে পরিবার বা বন্ধু পাড়ায় গুটিবাজি করা থেকে বিরত থাকা। অন্যের সমালোচনা থেকে নিজেদের বাচিঁয়ে থাকা।

২। কোন কথা অপছন্দ হলে – সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এড়িয়ে যাওয়া।

৩। আদর্শ ও মতাদর্শ বিষয় গুলো যদি নিজের মতের বাহিরে হয় তবে উগ্রতা প্রকাশ না করেই এড়িয়ে চলা।

📝 আমার মতামতঃ-

আমি ব্যাক্তিগত ভাবে – চেষ্টা করি ভালো কিছুই প্রচার করার জন্য। আমার প্রচারিত কথা গুলো আমার কথাই এবং আমার অনুভূতি। আমার সব কথাই সবার ভালো লাগবে তা আমি বিশ্বাস করিনা এবং সবার সেই কথা গুলো মানতেই হবে; তাতেও আমি বিশ্বাস করিনা। তবুও অনেক পরিচিত জন আছেন তারা মাঝেমধ্যেই কেনো জানি নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং ভদ্রতাসূচক বাক্য দিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু করে নিজের ভিতরে লুকিয়ে রাখা বিষ গুলো কটু বাক্যের মাধ্যমে, আলোচনা সমাপ্ত করেন। স্বাভাবিক ভাবেই, তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিক হয়ে যায়। তাই এমন অনেক মানুষই আছে যাদের ফ্রেন্ড লিস্টে না রেখে, সরাসরি ব্লগ করে রেখেছি। তারা সারাজীবন এর জন্য ব্লগই থাকবে বলে বিশ্বাস করি, আমি। সম্পর্ক খুব ভালো না হোক,অন্ততপক্ষে যেনো খারাপ এর দিকে না গড়ায়। #শেষকথা আমার কোন কিছুতে যদি আপনার পছন্দ না হয় তবে Skip করুন, এড়িয়ে চলা সম্ভব না হলে আনফ্রেন্ড Unfriend করে Block করুন; তবুও কটু বাক্য এডিয়ে চলুন।